নন্দন দত্ত, সিউড়ি: জমি বিতর্কে ফের বিশ্বভারতীকে (Visva Bharati) চিঠি দিলেন অমর্ত্য সেন। তিনি দাবি করেছেন, বাবার নামে থাকা জমি উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁরই প্রাপ্য। এ নিয়ে কোনও বিতর্কের অবকাশ নেই। আগামী জুনে শান্তিনিকেতন ফিরে এলে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। বিশ্বভারতীর যুগ্ম রেজিস্ট্রার এবং অ্যাসিস্ট অফিসারকে চিঠি দিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।
অমর্ত্য সেন (Amartya Sen) বর্তমানে বিদেশে। এই অবস্থায় তাঁর জমি দখল করতে পারে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই আশঙ্কা থেকেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। চিঠিতে অমর্ত্য সেন স্পষ্টভাবে জানান, “শান্তিনিকেতনের ‘প্রতীচী’ ১৯৪৩ সাল থেকে আমার পরিবারে দখলে এবং আমি নিয়মিত ব্যবহার করে আসছি। আমি জমির ধারক এবং এটি হস্তান্তর করা হয়েছিল। আমার বাবা আশুতোষ সেন এবং মা অমৃতা সেনের মৃত্যুর পরও দীর্ঘ ৮০ বছর জমির ব্যবহার একই রয়ে গিয়েছে। সেই লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সেই জমি নিয়ে কোনও বিতর্ক থাকতে পারে না।” সেন পরিবারের দাবি, “বোলপুর আদালতও বর্তমান ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং কোনও হস্তক্ষেপ বা শান্তিভঙ্গের অনুমতি দেওয়া উচিত নয় বলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। এরপরেও যদি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মানতে রাজি না হয়, তাহলে জুনে আমি শান্তিনিকেতনে ফিরব। তখনই আলোচনা করা যেতে পারে।”
অন্যদিকে, জমি ফেরত পেতে মরিয়া বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। আগেই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিশ্বভারতী জানায়, ১৯ এপ্রিল বেলা বারোটায় বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ভবনে চূড়ান্ত শুনানিতে অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্ক নিষ্পত্তি করা হবে। ১৮ এপ্রিল, সন্ধ্যা ছটার মধ্যে ই-মেল মারফত জানাতে হবে অমর্ত্য সেনের প্রতিনিধি হিসাবে কে উপস্থিত থাকছেন। বিতর্কিত আদেশপত্রের প্রতিলিপি জেলা পুলিশ সুপার, মহকুমাশাসক, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, ও শান্তিনিকেতন থানাকে পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যেই।
উল্লেখ্য, অমর্ত্য সেন চিঠিতে উল্লেখ করেন, বাবার নামে থাকা জমি উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁরই প্রাপ্য। ২০মার্চ, বোলপুর (Bolpur) মহকুমার সুরুল মৌজার ১৯০০/২৪৮৭ দাগ এবং খতিয়ান নম্বর ২৭০-এর জমিটির মিউটেশন অমর্ত্যের নামে রয়েছে। শুধু তাই নয়, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের নথিতেও জমির পরিমাণ ১.৩৮ একর বলা আছে। বাবা আশুতোষ সেনের নামে থাকা জমি অমর্ত্যের নামে করে দেওয়া হয় বোলপুর মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর থেকে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অবশ্য প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, ১৯৪৩ সালে অমর্ত্যের বাবা আশুতোষকে কখনওই ১.৩৮ একর জমি লিজ দেওয়া হয়নি। ১.২৫ একর জমি লিজ দেওয়া হয়েছিল। তার ভিত্তিতে বিশ্বভারতী অমর্ত্যের বিরুদ্ধে ১৩ ডেসিমেল জমি দখলের অভিযোগ আনে। সেই জমি ফেরতের দাবিতে অনড় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসনের একাংশের মতে, জমি অর্থনীতিবিদের নামে মিউটেশন হয়ে যাওয়ায় বিশ্বভারতীর সমস্ত অভিযোগ ‘অর্থহীন’। অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী জানান, অমর্ত্য সেন নিজেই জুন মাসে শান্তিনিকেতন ফিরে এসে জমি মাপজোখ এবং বিশ্বভারতীর শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে চান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.