সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বভারতীয় জমি দখল করে বাড়ি তৈরি করেছিলেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) পূর্বপুরুষরা। সম্প্রতি বিশ্বভারতীর তরফে তোলা এই অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যে সরগরম শান্তিনিকেতন। এবার এ নিয়ে তিনি নিজে মুখ খুললেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী উপাচার্য (VC of Vishva Bharati) বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে নিশানা করে বললেন, ”শান্তিনিকেতনী সংস্কৃতির সঙ্গে ওঁর আচরণের বিরাট ফারাক। উনি এই সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেননি। দিল্লির সরকারের পছন্দে এই পদে বসে নিজের ক্ষমতা জাহির করতে চাইছেন।”
শান্তিনিকেতনে (Santiniketan) ১৩৮ ডেসিমেল জমির উপর ‘প্রতীচী’ নামের বাসভবন তৈরি করেছিলেন অমর্ত্য সেনের দাদু, বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ক্ষিতিমোহন সেন। সেটা রবীন্দ্রনাথের আমলেই। এখন এই বাড়ির জমি নিয়েই যাবতীয় বিতর্ক উসকে দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, নিয়মানুযায়ী, ১২৫ ডেসিমেল জমি লিজ দিয়ে সেসময় বিশ্বভারতীর কর্মী, আধিকারিকদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। খুব কম সময়ের জন্য হলেও ক্ষিতিমোহন সেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। সেই হিসেবে তিনিও ওই জমির অধিকারী। এখন বিশ্বভারতীর দাবি, ১২৫ ডেসিমেলের জায়গায় যে ১৩৮ ডেসিমেল জমির উপর দাঁড়িয়ে ‘প্রতীচী’, অতিরিক্ত সেই ২৩ ডেসিমেল জমিটি বেআইনিভাবে অধিকৃত। অভিযোগের নিশানাই স্পষ্টই অমর্ত্য সেন।
ইদানিং বিশ্বভারতী নিজেদের জমি পুনরুদ্ধারে নেমে এই অভিযোগ তুলতেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এতদিন শান্তিনিকেতনের অন্দরে ঘোরাফেরা করলেও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেওয়ায় বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী এর নেপথ্যে ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি রয়েছে বলে মনে করেন। তিনি স্পষ্টই বলেন, ”উনি (অমর্ত্য সেন) আদর্শগতভাবে বিজেপি বিরোধী বলে তাঁর বাড়ি নিয়ে এমন চক্রান্ত করছে বিশ্বভারতী।” বকলমে মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় যে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, যিনি দিল্লির শাসকদল বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, তা বুঝতে বাকি ছিল না। শুধু তাই নয়, প্রিয় ‘অমর্ত্যদা’কে চিঠি লিখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে নোবেলজয়ীর প্রতি বিশ্বভারতীর আচরণে তিনি ব্যথিত। এই লড়াইয়ে সবরকমভাবে পাশে রয়েছেন।
এরপর অমর্ত্য সেনও আর নিশ্চুপ থাকেননি। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে নোবেলজয়ীর বক্তব্য, ”শান্তিনিকেতনে জন্ম এবং বড় হওয়ার সুবাদে আমি একটা কথা বলতে পারি। শান্তিনিকেতনী সংস্কৃতি এবং উপাচার্যের মধ্যে বিরাট ফারাক রয়েছে। উনি দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের পছন্দের, যে শাসকদলটি সম্প্রতি বাংলায় নিজের শক্তিবৃদ্ধি করছে। আর তাতেই উপাচার্যও অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চাইছেন। এতদিন ধরে আমার পরিবার শান্তিনিকেতনে থাকে, আমিও গেলে থাকি, কেউ কখনও আমাদের ‘জমি দখলকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেনি। এখন ওঁর তৈরি দখলকারীর তালিকায় নাকি আমার নাম আছে!” উপাচার্যকে নিশানা করে বেশ কড়া ভাষাতেই এই বিতর্কের জবাব দিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।
এদিকে, তাঁর প্রতি বিশ্বভারতীর এই আচরণের প্রতিবাদে রবিবার বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন বাংলার বিদ্বজনেরা। কবি জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার থেকে চিত্রকর যোগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসন্নরা বাংলা অ্যাকাডেমিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করবেন। রাজ্য সরকারের তরফে থাকবেন নাট্যকার তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়াতে এই বিক্ষোভে শামিল হতে পারেন আরও বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.