চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: মাধ্যমিকে এবার নম্বরের ছড়াছড়ি। রাজ্যে পাশের হার ৮৬.০৭ শতাংশ। যা নাকি অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে। মুড়ি-মুড়কির মত পরীক্ষার্থীদের সাফল্যের সময়েও প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ পড়ুয়া ফেল করল এবারের পরীক্ষায়। ঘটনায় কুলটির মিঠানি হাইস্কুলের পঠনপাঠনের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। গ্রামবাসীদের মতে কলঙ্কময় দৃষ্টান্ত স্থাপন হল এই স্কুলে।
মেধা তালিকায় ঠাঁই পাওয়া নিয়ে স্কুলগুলির নাম যেখানে উঠে আসছে চর্চায় সেখানে সম্পূর্ণ বিপরীত কারণে আলোচনার কেন্দ্রে রইল মিঠানি হাই স্কুল। এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২৩২ জনের মধ্যে মাত্র ১২২ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। অকৃতকার্য হয়েছে ১১০ জন। অর্থাৎ ফেল করেছে ৪৭ শতাংশ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবশ্য ঘটনাটিকে অসাফল্যের নজরে দেখছেন না। তাঁর দাবি যথেষ্ট সন্তোষজনক ফলাফল হয়েছে। এর মধ্যে ব্যর্থতার কিছু নেই। মাধ্যমিকের এই ফলাফল দেখে হতাশ হয়েছেন অভিভাবক ও প্রাক্তন স্কুল পরিচালন কমিটির সদস্যরা।
স্কুলের অভিভাবক তথা বর্তমান পরিচালন কমিটি সদস্য জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে, স্কুলের সংখ্যা বেড়েছে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে কন্যাশ্রীর অনুদান, ছাত্রছাত্রীদের সবুজসাথীর সাইকেল প্রদান হয়েছে। তার জন্যই মাধ্যমিকে এই সাফল্য, এতটা পাশের হার বৃদ্ধি হয়েছে।” এরপরেই জয়দেববাবুর প্রশ্ন মিঠানি হাইস্কুলে মাধ্যমিকের ফল এত খারাপ কেন? মিড-ডে মিল, কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর সাইকেল তো এই স্কুলের পড়ুয়ারাও পেয়েছে, তবে খামতিটা কোথায়? এই রহস্যে উদঘাটন করা প্রয়োজন।
[ আরও পড়ুন: ছক ভাঙা পড়াশোনাতেই এসেছে সাফল্য, ডাক্তার হতে চায় মাধ্যমিকে দশম সৌম্যদীপ ]
এই স্কুলের এক সময় প্রধান শিক্ষক ছিলেন যাঁরা তাঁদের মতে আগে বোর্ডে যে শতাংশ হারে মোট পাশের হার থাকত তার থেকেও তিন থেকে চার শতাংশ বেশি হারে মিঠানি স্কুলে মাধ্যমিকে পাশের হার থাকত। প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণর সংখ্যাও বেশি থাকত। তবে পঠনপাঠনের মান নিয়ে দীর্ঘ পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। এক কথায় কে দায়ী বলা মুশকিল।
স্কুলের শিক্ষকদের অভিযোগ, ৩৪ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। কিন্তু মাত্র ২০ জন শিক্ষক দিয়ে স্কুল চলছে। পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবও একটা সমস্যার কারণ। প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন পাল বলেন, “মিঠানি হাইস্কুল এমন একটা স্কুল এখানে এলিট শ্রেণির ছেলে মেয়েরা পড়তে আসে না। একেবারে আর্থিকভাবে বা সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছেলে মেয়েরা পড়ে। সবাইকে এখানে ভরতি নিতে হয়। তাই পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি থাকে। বাছাই করার জায়গা না থাকায় অনুর্তীর্ণদের সংখ্যাও তুল্যমূল্যভাবে বাড়ছে। যদিও গ্রামবাসীদের ক্ষোভ এই স্কুল নিয়ে বছর দশেক আগেও তাঁদের গর্ব ছিল। কিন্তু স্কুলে পঠনপাঠনের উপযুক্ত পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফেলের সংখ্যা বাড়ছে। সেই ঐতিহ্যের শিক্ষাঙ্গনে তাই কালিমা পড়ছে।
[ আরও পড়ুন: আইআইটি ক্যাম্পাসের কাছে যুবককে গুলি করে খুন, আতঙ্ক খড়গপুরে ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.