স্টাফ রিপোর্টার: সোনার কেল্লা ছবিতে জটায়ু ফেলু মিত্তিরকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘উট কি কাঁটা বেছে খায়?’’ গোয়েন্দার উত্তর ছিল, “না”। ধরা যাক, লালমোহন গাঙ্গুলি মেডিক্যাল কাউন্সিলে এসেছেন। প্রদোষ মিত্তির পাশে থাকলেও সব দেখেশুনে জটায়ু কিন্তু এমন প্রশ্ন করতেন না। বুধবার মেডিক্যাল কাউন্সিলের বাইরে দাঁড়িয়ে এক চিকিৎসক এমনই রসিকতা ছুড়ে দিয়েছেন আগন্তুকের দিকে। কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘একটা অভিযোগ জোগাড় হলেই কোনও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে নেমে পড়ত কাউন্সিল। বলতে বাধা নেই ডাক্তারবাবুর রসবোধ চূড়ান্ত। আসানসোলের শিশুবিশেষজ্ঞ। বেসরকারি হাসপাতাল ও নিজের চেম্বার নিয়ে দিন কেটে যায়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তিনি মেডিক্যাল কাউন্সিলের উত্তরবঙ্গ লবির চক্ষুশূল।
প্রবীণ শিশু বিশেষজ্ঞর বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাও অন্তত চার বছর হয়ে গেল। মাঝেমধ্যেই ফোনে ডাকা হয়। কাজকম্ম বাদ দিয়ে ছুটে আসেন কলকাতায়। কিন্তু শুনানি আর হয় না। তবে চার বছর আগের অভিজ্ঞতা এখনও সজীব। ষাটোর্ধ্ব ওই চিকিৎসককে ফোন করেছিলেন এক তরুণ। ফোন করে বলেছিলেন, ‘‘অমুকদা বলছেন।’’ তিনি পালটা উত্তর দিয়েছিলেন। নিজের পরিচয় দিতেই উল্টোদিক থেকে ভেসে আসে, ‘‘আমি ডা. বীরূপাক্ষ বিশ্বাস বলছি। এথিক্যাল কমিটির সদস্য। আপনার বিরুদ্ধে মস্ত অভিযোগ আছে।’’ প্রবীণ চিকিৎসকের এক ধমকে ফোন কেটে দিতে বাধ্য হয় বিরূপাক্ষ। কিন্তু তার পর থেকে মাঝে মধ্যেই ফোন করা হয়। নির্দেশ আসে দ্রুত কমিশনে হাজির হতে হয়।
রাজ্যের বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের অভিযোগ, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে অন্তত ৯০ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে শুনানি বছরের পর বছর আটকে আছে। কেন আটকে আছে? তার কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই। কাউন্সিলের জবাব চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আসে সেগুলির দ্রুত শুনানির জন্য অনলাইন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কিন্তু সেখানেও জটিলতা। আইএমএ রাজ্য শাখার যুগ্ম সম্পাদক ডা. রঞ্জন ভট্টাচার্যর অভিযোগ, ‘‘রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল চিকিৎসকদের কাছে মন্দিরের মতো। রাজনৈতিক মতের বাইরে সব চিকিৎসক আসতে পারেন। কিন্তু কুক্ষিগত করে রেখেছেন কতিপয় চিকিৎসক। ফলে চাপে পড়েছেন জেলার সদ্য পাস করা চিকিৎসকরা’’
একধাপ এগিয়ে রঞ্জনের অভিযোগ, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারাই যদি শুনানি থাকে তবে তার ফল কেমন হতে পারে সহজেই অনুমেয়। আরেক চিকিৎসকের অভিযোগ, শুনলাম কাউন্সিল অফিসে রাতে অফিস বন্ধের পর এলাহি খাওয়া-দাওয়া হয়? এমনটা কী করে সম্ভব?’’ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জনবাবুর নিশানা স্পষ্ট। তাঁর মতোই একাধিক চিকিৎসকের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতাল নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালের একাংশের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মেডিক্যাল কমিশনের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অম্লমধুর সম্পর্ক। কোনও চিকিৎসক কমিশনের কাজের বিরুদ্ধে সরব হলেই তঁার বিরুদ্ধে অাদাজল খেয়ে লেগে পড়ত কয়েকজন চিকিৎসক। রোগীর পরিবার থেকে একটা অভিযোগ হাতে পেলেই কার্যত কেল্লাফতে। উত্তরবঙ্গ লবির এই গোষ্ঠীর মধ্যে ছিলেন ডা. সন্দীপ ঘোষ।
তেমনই ‘জলপাইগুড়ির জেঠু’ বলে পরিচিত এক চক্ষু চিকিৎসকের নাম উঠে এসেছে। চিকিৎসকদের অভিযোগ, বিরূপাক্ষ বা অভীক দে তো রয়েছেই। এর বাইরে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন চিকিৎসককে প্রায় রোজ নিয়ম করে মেডিক্যাল কমিশনে অাসতে হত। অভিযোগ, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমির অধ্যাপক ডা. রূপক সাহা, ডা. করবী বড়াল-সহ একাধিক চিকিৎসক অধ্যাপক সপ্তাহের শেষে হাজির হতেন। অার জি করের প্ল্যাটিনাম জু্বিলি যদি পিরামিডের চূড়া হয়ে থাকে। তবে তার একদিকে কাউন্সিল সমান্তরাল স্বাস্থ্যভবনের স্বাস্থ্য-শিক্ষা বিভাগ। কয়েক বছরে এমন অভিযোগে চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ সরব হয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.