সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,দুর্গাপুর: পাঁচ লক্ষ টাকার নিচে অফলাইন টেন্ডার হলেই লক্ষ্মীলাভ হয় পঞ্চায়েত কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির। তাই বড় অঙ্কের টেন্ডার হলেও, তাকে ভাগ ভাগ করে পাঁচ লক্ষ টাকার নিচে আনাই এখন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে কাঁকসার বিভিন্ন পঞ্চায়েত কিংবা পঞ্চায়েত সমিতিতে। লক্ষ টাকার ‘কাটমানি’। জড়িয়ে সরকারি আধিকারিক-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও। ‘সিন্ডিকেট’এর নির্দেশেই করতে হবে কাজ। এই ফতোয় ঘিরে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের ভিতরে এখন প্রবল ক্ষোভ।
সরকারি কাজে ‘কাটমানি’র অসুখ সারাতে মুখ্যমন্ত্রী বহুবার কড়া বার্তা দিয়েছেন দলের কর্মীদের। এমনকী এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন স্তরে। তাতে সাড়াও বেশ ভালই পড়েছে। অনেক স্তরেই দুর্নীতি রোখা গিয়েছে বলে দাবি প্রশাসনিক কর্তা, জনপ্রতিনিধিদের। কিন্তু দুর্গাপুরে এখনও সেই অসুখ রয়েই গিয়েছে। অন্তত অভিযোগ তেমনটাই।
টোল ট্যাক্স কিংবা একশো দিনের কাজ – সবেতেই পাঁচ লক্ষ টাকার নিচে টেন্ডার করে লুঠের অভিযোগ উঠল কাঁকসায়। কাঁকসা ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতের মধ্যে ছ’টিই তৃণমূলের দখলে। পঞ্চায়েত সমিতিও তৃণমূলের। মাস খানেক আগে কাঁকসা ব্লক থেকে একশো দিনের কাজের একটি টেন্ডার হয়। টেন্ডারের মূল্যায়ণ না থাকায় অফলাইনেই দরপত্র নেওয়া হয়। কাজের পরিমাণ দেখে ঠিকাদার বা ভেন্ডাররা নিশ্চিত হন যে তা কোনওভাবেই লাখ তিরিশের নিচে হবে না। অভিযোগ, তা সত্বেও অফলাইন টেন্ডার করে করে গোটা প্রক্রিয়াটাই তুলে দেওয়া হয় ‘সিন্ডিকেট’এর হাতে। তারাই ভাগাভাগি করে একটি দরপত্র ফেলে কাজ পাওয়া নিশ্চিত করে। একইভাবে প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকার টেন্ডার পাঁচ লাখে নামিয়ে পঞ্চায়েত বা সমিতির আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করেও ডাকা হয় টোল ট্যাক্সের টেন্ডার। যদিও বিতর্ক চরমে ওঠায় তা বাতিলও হয়ে যায়। এককথায়, স্রেফ টেন্ডার নিয়ে বিতর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার হতে হচ্ছে কাঁকসার বিভিন্ন পঞ্চায়েতকে। ফলে উন্নয়ন যেমন থমকে যাচ্ছে, তেমনই সরকারি কোষাগারেও রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে।
তবে এই টেন্ডারের বিতর্ক নিয়ে কাঁকসার বিডিও সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের কথায়, “স্বচ্ছভাবেই টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবে সিন্ডিকেট বা দুর্নীতি নিয়ে এখনও কোনও অভিযোগ পাইনি।” আসলে ব্লক অফিসেই ‘ঘোগের বাসা’ বলে দাবি তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের। সেখানেই চলে ‘সিন্ডিকেট’-এর দাপট আর মদত দেয় স্থানীয় নেতৃত্ব। এর ফলে দলের ভাবমূর্তিরও ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করছেন তাঁরা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, “তৃণমূলের কোনও নেতা বা কর্মী এই কাজে যুক্ত থাকলে এখনই আমাদের জানাক। আমরা দল থেকে তাঁদের তাড়িয়ে দেব। তৃণমূলে থেকে এই ভাবে আর্থিক দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না দল।” শীর্ষ নেতৃত্ব যতই হুঁশিয়ারি দিক, পঞ্চায়েতের কাজে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.