সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আন্দামানের হ্যাভলক দ্বীপে আটকে থাকা পর্যটকদের ফেরাতে উদ্যোগী হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং৷ আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের লেফটেন্যান্ট গভর্নর জগদীশ মুখীর সঙ্গে কথা বলেছেন রাজনাথ সিং৷ সে কথা জানিয়ে পরপর টুইট করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ টুইটে জানান, “হ্যাভলক দ্বীপে আটকে থাকা পর্যটকরা নিরাপদে রয়েছেন৷ আমি তাঁদের পরিবারের সদস্যদের শান্ত থাকতে আবেদন জানাচ্ছি৷ আটকে থাকা পর্যটকদের উদ্ধার করে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে৷” সাইক্লোনের দাপট কমে এলেই অবিলম্বে উদ্ধারকাজ শুরু হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করেছেন রাজনাথ সিং৷ পর্যটকদের উদ্ধার করে আনার জন্য রেসকিউ টিম পোর্টব্লেয়ারের কাছেই তৈরি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতির জেরে আন্দামানের এই দ্বীপে আটকে পড়েছেন ১৪৯৭ জন পর্যটক৷ যার মধ্যে ৮৩৭ জনই পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র৷ কিন্তু, নিম্নচাপের জেরে উত্তাল বঙ্গোপসাগরে কিছুতেই হ্যাভলকের বন্দরে ভিড়তে পারছে না উদ্ধারকারী জাহাজ৷ আবহাওয়ার পরিস্থিতি যেরকম তাতে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সমুদ্র এমনই উত্তাল থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর৷ সেক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে কোনও পর্যটকই হ্যাভলক থেকে পোর্টব্লেয়ার ফিরতে পারবেন না৷
The government will launch the rescue operations immediately after the intensity of the cyclone reduces. The teams are ready in Port Blair.
— Rajnath Singh (@rajnathsingh) December 8, 2016
ভারতে মহাসাগরে অবস্থানকারী নিম্নচাপের জেরে মঙ্গলবার রাত থেকেই অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে আন্দামানের দ্বীপগুলিতে৷ নিচু এলাকাগুলোয় জল ঢুকে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ অন্যান্য এলাকাগুলিতেও জনজীবন বিপর্যস্ত৷ এদিকে ভারত মহাসাগরে ক্রমশই শক্তি বাড়ছে নিম্নচাপের৷ হ্যাভলক থেকে ৩০১ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে সেটি৷ আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা গভীর থেকে গভীরতর নিম্নচাপে পরিণত হবে৷ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পরের ২৪ ঘণ্টায় পূর্ণমাত্রার সাইক্লোনেও পরিণত হতে পারে নিম্নচাপটি৷ তাই রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন পর্যটকরা৷
ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্পও আটকে পড়া পর্যকদের মধ্যে সুনামির আতঙ্ক বাড়িয়েছে৷ যদিও আবহাওয়া দফতরের তরফে আশ্বস্ত করা হয়েছে, এখনও সুনামি সতর্কতা জারির পরিস্থিতি তৈরি হয়নি৷ আন্দামান পর্যটন বিভাগের ডিরেক্টর অমিত আনন্দ জানিয়েছেন, হ্যাভলকে বৃহস্পতিবার বিকেলের আগে কোনওরকম উদ্ধারকাজ শুরু করা যাবে না৷ আজ দুপুরের পর নিম্নচাপ ওড়িশার দিকে সরে যেতে পারে বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে৷ তখন ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরে পরিস্থিতি অনুকূল হবে৷ তারপরেই শুরু হবে উদ্ধারকাজ৷ গতকাল, আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করতে এসেও হ্যাভলকের বন্দরে ঢুকতে পারেনি নৌসেনাবাহিনীর চারটি যুদ্ধজাহাজ বিত্রা, বাঙ্গারাম, কুম্ভীর ও এলসিইউ ৩৮৷
ত্রাণবোঝাই করে পাঠানো হয় জাহাজগুলি৷ ওই জাহাজেই পর্যটকদের পোর্ট ব্লেয়ারে ফিরে আসার কথা৷ কিন্তু হ্যাভলকের কাছাকাছি পৌঁছেও উত্তাল সমুদ্র এবং প্রবল ঝোড়ো হাওয়ার কারণে বন্দরে ভিড়তে পারেনি জাহাজগুলি৷ বাধ্য হয়েই বন্দর থেকে দূরে বাইরে অপেক্ষা করেছে নৌবাহিনীর ওই চার জাহাজ৷ দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় শেষপর্যন্ত পাইলট বোটের সাহায্যে কোনওক্রমে ত্রাণের জিনিস পৌঁছে দেওয়া হয়েছে পর্যটকদের কাছে৷ খাবার ছাড়াও পাঠানো হয়েছে জল, ওষুধ এবং বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য প্লাস্টিকের চাদর৷ তাতে সাময়িক স্বস্তি পেলেও আতঙ্ক কাটছে না৷ কোনওক্রমে পোর্টব্লেয়ারে পৌঁছনোর জন্য আকুল হয়ে জাহাজের অপেক্ষা করছেন আটকে পড়া পর্যটকরা৷
আন্দামানের পর্যটন বিভাগের ডিরেক্টর অবশ্য পর্যটকদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, “বিমান সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে৷ সবাইকে বলা হয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে পরিষেবা দিতে হবে৷ তার জন্য কোনও বাড়তি ভাড়া নেওয়া যাবে না অধিকাংশ সংস্থা সম্মতি জানিয়েছে৷ পোর্টব্লেয়ারে পৌঁছনোমাত্রই যাতে তাদের কলকাতায় আনা যায় সেজন্য বিমান পরিষেবার সময়সূচিও পরিবর্তন করা হয়েছে৷ এছাড়াও প্রচুর নৌ বাহিনীর নৌকা ও স্থানীয় জলযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে পরিস্থিতির উন্নতি হলেই তারা পৌঁছতে পারে হ্যাভলক দ্বীপে৷ ফিরিয়ে আনতে পারে পর্যটকদের৷” পোর্টব্লেয়ার থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের এই দ্বীপটিতে জলযানেই একমাত্র পৌঁছনো সম্ভব৷ এছাড়া হেলিকপ্টার পৌঁছাতে পারে৷ কিন্তু, ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতির কারণে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া চলায় হেলিকপ্টারও পৌঁছাতে পারছে না হ্যাভলকে৷ তাই আপাতত হ্যাভলকের বিভিন্ন হোটেলে কোনওরকমে মাথা গুঁজে রয়েছেন পর্যটকরা৷ আনন্দ অবশ্য জানিয়েছেন, পর্যটকদের সুবিধার্থে স্থানীয় মানুষ প্রতিটি হোটেলে পৌঁছে পর্যটকদের পরিষেবা দিচ্ছেন৷
আন্দামানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গ সরকারও৷ দফায় দফায় যোগাযোগ করা হচ্ছে আন্দামান প্রশাসনের সঙ্গে৷ উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী নিজে নবান্ন থেকে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেন আন্দামান সরকারের সঙ্গে৷ সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে খবর নেন এবং জরুরি নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে-কে৷ পরে পর্যটকদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব, তা নিয়ে দু’জনেই আলোচনা করেন আন্দামান প্রশাসনের সঙ্গে৷ বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান জানান, “আবহাওয়া অত্যন্ত খারাপ৷ তাই উদ্ধারকাজে সমস্যা হচ্ছে৷ তবে আমরা সতর্ক রয়েছি৷ কেন্দ্রর বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিবের সঙ্গেও কথা হয়েছে৷ আটক পর্যটকরা যাতে দ্রুত নিরাপদে ফিরতে পারেন সে ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে৷” রাজ্যের তরফে এদিন আটকে পড়া পর্যটকদের পরিবারের জন্য নবান্নে একটি কন্ট্রোল রুম (নাম্বার ১০৭০) খোলা হয়েছে৷ পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “পর্যটকদের ফেরাতে সবরকম উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ তবে পর্যটকরা নিরাপদে৷ তাঁদের সঙ্গে পর্যাপ্ত খাবারও আছে৷”
২০০৪ সালের জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ার কাছে ভারত মহাসাগরে ভূমিকম্পের পর সুনামি আছড়ে পড়েছিল আন্দামানে৷ সেই ঘটনায় প্রাণ হারান দশ হাজারেরও বেশি স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটক৷ বুধবার একদিকে সাইক্লোন পরিস্হিতি ও অন্যদিকে ভূমিকম্পের জেরে তাই রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা৷ ফোন কিংবা ইন্টারনেটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন৷ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তাঁরা৷ মঙ্গলবার রাত থেকে অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জেরে পোর্টব্লেয়ার-সহ আন্দামানের সবক’টি দ্বীপেই জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত৷ নিচু এলাকাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে৷ এদিকে, নৌবাহিনীর তরফে বলা হয়েছে, আন্দামানের পরিস্হিতি একটু শান্ত হলেই আটক পর্যটকদের উদ্ধার করে আনা হবে৷ তবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.