Advertisement
Advertisement

Breaking News

Tamluk

তমলুক জয়ের চাবিকাঠি অন্তর্ঘাত! ৪ জুন শেষ হাসি হাসবে কে?

'নেক টু নেক' লড়াইয়ে লক্ষ-লক্ষ ভোটের ব্যবধানে একতরফা জয়ের দাবি ধোপে টিকবে না!

All parties worried about sabotage in Tamluk
Published by: Paramita Paul
  • Posted:May 29, 2024 8:20 pm
  • Updated:May 29, 2024 8:27 pm  

সৈকত মাইতি, তমলুক: ভোট যুদ্ধে জয়ের চাবিকাঠি অন্তর্ঘাত! আর তাতেই যেন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে চিন্তায় সব পক্ষই। ঘোলা জলে মাছ ধরে শেষ হাসি কে হাসবে? লাখ টাকার এমন প্রশ্নে রীতিমতো জল্পনা তুঙ্গে রাজনৈতিক মহলে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক লোকসভায় ভোটার সংখ্যা ছিল ১৮ লক্ষ ৫০ হাজার ৫৩৪ জন। যার মধ্যে নতুন ভোটার ৫৬ হাজার ৯৯৮ জন। এমন অবস্থায় মোট ১৩০ কোম্পানির কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে প্রতি বুথে ওয়েবকাস্টিং মাধ্যমে নির্বিঘ্নে ভোট গ্রহণে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা গিয়েছে। ভোট পড়েছে ৮৪.৭৯ শতাংশ। আর এখানেই উঠেছে প্রশ্ন। স্বতঃস্ফূর্ত এই বিপুল সংখ্যক ভোটার ঠিক কোন পক্ষে গিয়েছে, তা নিয়ে ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এক্ষেত্রে অবশ্য বিগত দিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৯ লোকসভা নির্বাচন শাসকদল তৃণমূল পায় ৫০.০২ শতাংশ। বিজেপি এবং বামেরা পায় যথাক্রমে ৩৬.৯৫ এবং ৯.৪২ শতাংশ ভোট।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ শুরু উত্তরে, সামান্য বৃষ্টিতেই সিকিমে ফুঁসছে পলি ঢাকা তিস্তা]

এর পর ঠিক বছর দুয়েকের মধ্যেই ২০২১ সালের ফলাফলে এই শতাংশ হয়ে দাঁড়ায় তৃণমূলের ৪৬.২০ শতাংশ, বিজেপি পায় ৪০.৪৭ এবং বাম-কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে আসে মাত্র ৮.২৬ শতাংশ ভোট। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ভোটের ফলাফলে অনেকটাই চমক দেয় বামেরা। সে বারে তাদের ভোট বেড়ে হয় ১২.৩৫ শতাংশে। তৃণমূল ৪৫.০৯ শতাংশ এবং বিজেপি ৩৯.২৯ শতাংশ ভোট পায়। ফলে একুশ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ভোট কমে প্রায় ৭ শতাংশ।

এমন অবস্থায় গত প্রায় দুমাস ধরে লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে দাপিয়ে বেড়ায় বামেরা-সহ শাসকবিরোধী সব পক্ষই। ফলে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আশাবাদী সকলেই। যুযুধান দুই পক্ষেরই দাবি, তারা ৩০-৪০ হাজারের ভোটের ব্যবধানে জয়ী হচ্ছেন। বিজেপির বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল হিসেবে তমলুক, মহিষাদল এবং নন্দকুমার বিধানসভাগুলিতে প্রায় পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে লিড থাকছে বলে দাবি করা হয়েছে। যে বিধানসভাগুলিতে মূলত শাসক দল তৃণমূলের প্রার্থীদের দখলে ছিল। অপরদিকে বিজেপির দখলে থাকা বিধানসভার মধ্যে নন্দীগ্রামে ১০ হাজার, হলদিয়াতে ১৫ এবং ময়নাতে ৫ হাজার ভোটের লিড থাকবে বলে দাবি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তৃণমূলের দখলে থাকা পূর্ব পাশকুড়া বিধানসভাতে অবশ্য বিজেপি প্রায় সমান ফলাফল হবে বলে দাবি করছে।

[আরও পড়ুন: মাঝ আকাশে বিমান, সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে দৌড়তে শুরু করলেন যাত্রী! তার পর?]

অপরদিকে, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের পক্ষ থেকে নন্দকুমার বিধানসভায় ৬ হাজার, মহিষাদলে ৮ হাজার, পূর্ব পাঁশকুড়ায় ১৩ হাজার, তমলুক বিধানসভায় ৩ হাজার ও ময়না বিধানসভায় ৫ হাজার ভোটে লিড রাখার দাবি করা হয়েছে। তবে হলদিয়াতে ৬ হাজার, নন্দীগ্রামে ৭ হাজার কম মার্জিনের কথাও স্বীকার করা হয়েছে। তার মধ্যেও নিজেদের জয় প্রায় নিশ্চিত বলে দাবি করেছেন শাসকদল তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির তমলুক সংগঠনিক জেলা নেতা তথা প্রাক্তন বিচারপতির ভোট প্রচারের ছায়া সঙ্গী বামদেব গুছাইতও দাবি করে বলেন, বিজেপি প্রার্থী লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হচ্ছেন। যদিও তাদের এই দাবি নস্যাৎ করেছে বামেরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, “এবারের নির্বাচন আমাদের ভোটের শতাংশ বাড়বেই। তাই কে কত ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন, তা এখনই বলা নিশ্চিত নয়।”

তবে এই লোকসভা নির্বাচনের বিভিন্ন দলের ভোট ম্যানেজাররা যাই বলুক না কেন, এবারের ফলাফল নিয়ে যে সকলেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তা তাদের মুখের অভিব্যক্তিতেই স্পষ্ট ধরা পড়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, এবারের এই নির্বাচন সিংহভাগ ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ নির্বাচন হয়েছে। এবং এক্ষেত্রে বিভিন্ন নীতির প্রশ্নে উভয়পক্ষের মধ্যেই চোরাস্রোত যে একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে তাও অনেকটাই মেনে নিয়েছেন উভয় পক্ষই। তাই দলের মধ্যে থেকেও দলবিরোধী এই অন্তরঘাত ঠিক কতটা নৌকাডুবির কারণ হয়ে উঠবে তা শুধু সময়ের অপেক্ষায়!

কারণ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটা অংশের দাবি, অধিকারী গড় হিসেবে পরিচিত নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের এই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় শুভেন্দু ভোট মেশিনারি এবারে রীতিমতো সক্রিয় ছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে। এর ফলে প্রায় মাসখানেক ধরে লক্ষণ শেঠের অনুগামী হিসেবে পরিচিত বর্তমানে সিপিএমের কোণঠাসা নেতারা শুভেন্দুর প্ররোচনায় পা দিয়ে যথেষ্টই অন্তর্ঘাত ঘটিয়েছে জেলা সিপিএমের ভোটবাক্সে! তেমনি অন্যদিকে আবার জেলায় শুভেন্দু অনুগামী হিসেবে পরিচিত তৃণমূলের একটা বড় অংশ, যারা কিন্তু এবারে ভোটে যথেষ্টই নিষ্ক্রিয় থেকে আখের বিজেপির হাতকেই শক্ত করেছে বলে দাবি। এদিকে আবার বিজেপির আদি নেতা হিসেবে পরিচিত একটা বড় অংশ আবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নিষ্ক্রিয় ছিল। ফলে ‘নেক টু নেক’ এই লড়াইয়ে লক্ষ-লক্ষ ভোটের ব্যবধানে একতরফা জয়ের দাবি যে খুব একটা ধোপে টিকবে না তা বলাই বাহুল্য!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement