সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: শ্রমিক স্বার্থে দেশে এই প্রথমবার। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একজোট হল সব শ্রমিক সংগঠন। রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত সংস্থা সেইল ও কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে এবার এক সুর বাঁধল সিটু, ইনটাক, বিএমএস। কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন না হয়েও আইএনটিটিইউসিও তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে। আগামী ৩০ জুন দেশে ইস্পাত শিল্পে ধর্মঘটের আহ্বান জানাল শ্রমিক সংগঠনগুলি।
ইস্পাত শিল্পে শ্রমিক বঞ্চনার একাধিক দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হল বিএমএসও। সোমবার অধিকাংশ শ্রমিক সংগঠন সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষকে ‘স্ট্রাইক নোটিস’ জমা দেয়। একই দাবিতে মঙ্গলবার নোটিস দেবে বিএমএসও। নয়া বেতন চুক্তির নামে সেইল কর্তৃপক্ষের ‘প্রহসন’ ছাড়াও বিগত দশ বছরের বকেয়া প্রাপ্য দিতে অযথা বিলম্ব, শ্রমিকের অর্জিত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, চুক্তির পরও পেনশন খাতে কম টাকা দেওয়ার অভিযোগ এনেছে আসন্ন ধর্মঘটে সামিল শ্রমিক সংগঠনগুলি।
সম্প্রতি সেইলের ‘র মেটিরিয়ালস ডিভিশন’-এর(আরএমডি) সদর দপ্তর কলকাতা থেকে সরিয়ে বোকারো ও রাউরকেল্লায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে আরও চটেছে এই রাজ্যের সেইলের ইউনিটের শ্রমিক সংগঠনগুলি। আগে এই রাজ্যে অবস্থিত সেইলের কারখানাগুলির নিজস্ব মাইনস থাকলেও আরএমডি গঠনের পর সেই সুবিধা উঠে গিয়েছে। কিন্তু প্রতিটি ইউনিটে আকরিকের সমবন্টনের সুবিধা থাকায় সমস্যা হত না। রাজ্যে আকরিকের কোনও খনি নেই। এদিকে সেইলের খনি বোকারো ও রাউরকেল্লার সঙ্গে যুক্ত করা হলে এই রাজ্যের ইউনিট ডিএসপি, মিশ্র ইস্পাত কারখানা ও ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টকে বাজার থেকে বাজার দরেই লৌহ আকরিক কিনতে হবে বলে মনে করছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। ফলে বিশাল লোকসানের মুখে পড়তে হবে এই তিন ইউনিটকে। কেন্দ্রের পদক্ষেপ এই তিন ইউনিটকে কার্যত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল বলেই দাবি করেছে তারা।
বাংলার প্রতি কেন্দ্রের এই বঞ্চনাও আসন্ন ধর্মঘটের অন্যতম ইস্যু। আগামী ২৮ জুন সেইলের প্রতিটি ইউনিটের সামনে কালো পতাকা নিয়ে প্রতিবাদ ও ২৯ জুন রিলে অনশনে সামিল হবেন ইস্পাত শ্রমিকরা। এ ব্যাপারে ডিএসপি সিটুর যুগ্ম সম্পাদক সৌরভ দত্ত জানান, “এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের সামনে ইস্পাত শ্রমিকরা। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে তারা। এই রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা ছাড়াও ন্যায্য অধিকার ও দাবিতে এই ধর্মঘট।”
আরএসএসের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস কেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে? এই প্রসঙ্গে বিএমএসের ‘স্টিল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’র সহ সভাপতি অরূপ রায় বলেন, “কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নয়। সেইল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিতে আমরা সবসময় তাদের পাশে থাকি। ইস্পাত শ্রমিকদের দাবি শ্রমিক স্বার্থেই কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করতে হবে।” একই সুরে ডিএসপি আইএনটিটিইউসির সহকারী সাধারণ সম্পাদক স্নেহাশিস ঘোষ জানান, “শ্রমিক স্বার্থে আঘাত হেনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের সব সেইলের ইউনিটগুলোকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছে। এরই বিরুদ্ধে আমরা সবাই সরব হয়েছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.