ছবি: পিটিআই৷
বিক্রম রায়, আলিপুরদুয়ার: অসমের নিউ বঙ্গাইগাঁও-এ বোন ভাস্বতীর বিয়ে দিয়েছিলেন আলিপুরদুয়ার শহরের নিউটাউন এলাকার সমীরণ পাল। সেটা ১৯৯২। বেশ চলছিল। কিন্তু অসমের চুড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর থেকে ঘুম নেই। কারণ, নাগরিকপঞ্জিতে বোনের নাম নেই। একই দশা হয়েছে আলিপুরদুয়ারের নেতাজি রোডের কুণ্ডুপাড়ার শম্ভু পালের। ১৯৯৪ সালে মেয়ে মিঠুর বিয়ে হয় নিউ বঙ্গাইগাঁওয়ের অভয়পুরি এলাকায়। স্বামী দীপকচন্দ্র পাল পেশায় ব্যবসায়ী। নাগরিকপঞ্জিতে দীপকবাবুদের নাম থাকলেও মিঠুদেবীর নাম নেই।
শুধুমাত্র সমীরণবাবু অথবা শম্ভু পাল নয়, আলিপুরদুয়ার জেলাজুড়ে আতঙ্কের ছায়া। যুগযুগ থেকে এই এলাকার মানুষ ব্যবসা ও বৈবাহিক সূত্রে অসমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। আলিপুরদুয়ার শহরের অন্তত ষাট শতাংশ বাসিন্দা বিভিন্ন কারণে প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। কেউ সেখানে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকেই সেখানে বিয়ে করেছেন। এভাবেই গড়ে ওঠা আত্মীয়তার সম্পর্ক এক ধাক্কায় ভেঙে যেতে বসেছে দেখে ঘরে ঘরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। জটিলতা আরও বেড়েছে অসম সরকার থেকে আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনকে কোনও তালিকা না পাঠানোয়। প্রত্যেকে উদ্ভ্রান্তের মতো ফোনে যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করছেন প্রিয়জনের নাম পঞ্জিতে রয়েছে কি না।
নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর বৈঠকে বসেন আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের কর্তারা। জেলাশাসক নিখিল নির্মল বলেন, “আমরা সবদিক থেকে প্রস্তুত আছি। কাউকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না। বিভিন্ন ফ্লাড শেল্টারগুলি ফাঁকা রয়েছে। কিন্তু, অসম প্রশাসনের কাছে যাঁদের নাম বাদ পড়েছে ও সংযোজন হয়েছে তাঁদের তালিকা চেয়েছিলাম৷ ওঁরা দেয়নি। তালিকা পেলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হত।” অসম থেকে কেউ আলিপুরদুয়ার জেলায় আশ্রয়ের জন্য এসেছেন কি না সেই খবর এখনও জেলা প্রশাসনের কাছে নেই। জেলাশাসক বলেন, “এখনও কেউ অসম থেকে এসেছেন এমন খবর নেই।”
কিন্তু, যে কোনও মুহূর্তে উদ্বাস্তুর ঢল নামতে পারে এমনই আশঙ্কায় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, নথি জমা দেওয়ার পরও পঞ্জিতে নাম ওঠেনি। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। শহরের নিউটাউন এলাকার সমীরণ পাল বলেন, “বাবার ১৯৫১ সালের পাসপোর্ট-সহ বিভিন্ন নথি বোন ভাস্বতী জমা দিয়েছে। তবুও নাম নেই।” কলকাতার কাঁচড়াপাড়ার মেয়ে মন্টি ভৌমিক সম্পর্কে ভাস্বতীদেবীর জা। পরিবারের অন্যদের নাম উঠলেও নাগরিকপঞ্জিতে মন্টিদেবীর নাম নেই। নেতাজি রোডের কুন্ডুপাড়ার শম্ভু পাল বলেন, “দিনরাত ফোন করছি। বুঝতে পারছি না পরিণতি কী হবে। বাংলার যে সব মেয়েদের অসমে বিয়ে হয়েছে তাঁদের ৯০ শতাংশের নাম অসমের নাগরিক পঞ্জিতে নেই। এটা ষড়যন্ত্র করেই করা হয়েছে।”
জেলার অসম লাগোয়া কুমারগ্রাম ব্লকে উদ্বেগ আরও বেশি। বিভিন্ন প্রয়োজনে এখানকার মানুষের সঙ্গে অসমের যোগাযোগ রয়েছে। সেখানকার নাগরিক পঞ্জি যেন ভেঙে চুরমার করেছে মেলবন্ধনের এতদিনের ছবি। তৈরি করেছে অবিশ্বাস। উদ্বাস্তুর ঢল নামলে প্রথমে এই ব্লকের উপরে প্রভাব পড়বে। জেলা প্রশাসন থেকে তাই সতর্ক করা হয়েছে রাতে যেন সেখানে লোডশেডিং না হয়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.