রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: বাবা রাজমিস্ত্রি। সামান্য আয়ে টেনেটুনে চলে সংসার। আলাদা করে কোচিং নেওয়ার সাধ থাকলেও সাধ্য ছিল না। বাস্তব মেনে নিয়ে জেদকে হাতিয়ার করেই নিয়েছিলেন প্রস্তুতি। আর তাতেই বাজিমাত। বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছাত্র বাপ্পা সাহা ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (UPSC) পরিচালিত ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় সর্ব ভারতীয় স্তরে এ বছর দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেন। আর সেই খবর আসতেই যেন দারিদ্রের উঠোনে পড়ল আনন্দের আলো।
আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া দক্ষিণ মাঝের ডাবরি গ্রামের এই ছেলের সাফল্যে হইচই পড়ে গিয়েছে গোটা মহল্লায়। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় সর্ব ভারতীয় স্তরে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করার পথ অবশ্য সহজ ছিল না বাপ্পা সাহার। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের পাঠ চুকিয়ে সে ভরতি হয় আলিপুরদুয়ার শহরের অনামি গোবিন্দ হাই স্কুলে। সেখান থেকেই বিজ্ঞান বিভাগে ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ। এর পর বিএসসি এগ্রিকালচার নিয়ে ভরতি হয় উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০২০ সালে সেখান থেকে অত্যন্ত ভাল রেজাল্ট করে বাপ্পা। ওই বছরই এমএসসি এগ্রিকালচার স্ট্যাটিসস্টিক্যাল নিয়ে নতুন দিল্লির ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচার ইন্সটিটিউটে ভরতি হন তিনি। পাশাপাশি চলে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি। প্রথমবার পরীক্ষাতে বসেই এল সাফল্য।
জানা গিয়েছে, লিখিত পরীক্ষায় ভাল র্যাঙ্ক করেন তিনি। গত ১৯ ডিসেম্বর দিল্লির ইউপিএসসি ভবনে হয় ইন্টারভিউ। সব মিলিয়ে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষা ফাইনাল রেজাল্ট বের হয় বুধবার। ইউপিএসসির পক্ষ থেকে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাতেই দেখা যাচ্ছে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষা দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ মাঝেরডাবরির ছেলে বাপ্পা সাহার নাম।
বাপ্পা সাহা বলেন, “বিএসসি এগ্রিকালচার নিয়ে পড়ার সময় আইএসএসইর কথা জানতে পারি। তখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরেও এলাকায় দুঃস্থ পড়ুয়াদের নিয়ে কোচিং করানোর ইচ্ছে আছে।’’ বাপ্পার বাবা গোপাল সাহা বলেন, ‘‘আর্থিক কারণে নিজে ঠিকমতো পড়তে পারিনি। কিন্তু ছেলেমেয়েদের পড়াশুনায় খামতি রাখিনি। ছেলে আজ দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে জেনে খুব ভাল লাগছে। ও মানুষের মতো মানুষ হোক এটাই চাই।’’ গৃহবধূ মা লক্ষ্মী সাহা অবশ্য ছেলের রেজাল্ট শুনে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.