স্টাফ রিপোর্টার: ঝেঁপে বৃষ্টি হচ্ছে তরাই-ডুয়ার্সে। ভরা বর্ষায় যেমন হয় আর কী! রাজ্যের আর একদিকে ঠিক উলটো আবহ। ঝকঝকে আকাশে যেন শরতের সকাল। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী চার-পাঁচদিন অতি বৃষ্টিতে ভাসবে উত্তরের জেলাগুলি। দক্ষিণবঙ্গকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতেই।
[আরও পড়ুন: ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে ধর্ষণ, গলাকাটা দেহ উদ্ধার তরুণীর়়]
বিশেষজ্ঞদের কথায়, একে দেরিতে বর্ষার আগমন, তার উপর বিক্ষিপ্ত বর্ষণ। সব মিলিয়ে দক্ষিণে বাড়ছে বৃষ্টির ঘাটতি। পশ্চিম রাজস্থান থেকে মধ্যপ্রদেশ হয়ে ছত্তিশগড় এবং ওড়িশা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা। পাশাপাশি, মৌসুমি বায়ুর অধিক জোগানের জেরে আগামী বুধ-বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তরের জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “উত্তরের পাঁচ জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে।” আর দক্ষিণ? তাঁর কথায়, বাতাসে রয়ে যাওয়া জলীয় বাষ্পের জেরে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হবে।
গত ২১ জুন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের হাত ধরে রাজ্যে ঢুকে পড়েছিল মৌসুমী বায়ু। প্রসঙ্গত, এ বছর ১৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে দক্ষিণবঙ্গে একইসঙ্গে পা রাখে বর্ষা, যা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। স্বভাবতই দক্ষিণবঙ্গবাসী উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু রাত পোহাতেই আবহাওয়ার মতিগতি বদলে যায়। বৃষ্টি তো দূরের কথা, ঘামে জবজবে হতে হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গবাসীকে। আলিপুর হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, যে নিম্নচাপের টানে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকেছিল, সেটি দুর্বল হয়ে পড়ায় দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঝিমিয়ে পড়েছে। সেই সুযোগে আবার চেপে বসেছে আর্দ্রতার অস্বস্তি। নতুন করে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি না হলে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা মেজাজে ফিরবে না। অস্বস্তিও কাটবে না বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বাতাসে রয়ে যাওয়া এবং সাগর থেকে জলীয় বাষ্পের সুবাদে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির দক্ষিণের মাটি ভিজলেও ফের ঘেমো গরম ফেরার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। তবে বর্ষার মরশুমে এমন উলটপুরাণ বিচিত্র কিছু নয়। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আনাগোনার সুবাদে এই সময় দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে রাশি রাশি জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস ঢোকে। কিন্তু তাকে উপরে ঠেলে তুলে মেঘে পরিণত করার মতো কোনও প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে যায়। অস্বস্তি তুঙ্গে ওঠে।
গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বেশ দেরিতে রাজ্যে পা রেখেছে বর্ষা। তার উপরে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি নেই। হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, ২৩ জুন পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি অনেকটাই বেড়েছে। যেমন সবাইকে টেক্কা দিয়ে হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার এবং উত্তর দিনাজপুরে বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ ১০০%। কার্যত চলতি মরশুমে ওই জেলাগুলিতে সেভাবে বৃষ্টি হয়নি। পূর্ব মেদিনীপুরে ঘাটতি ৯৪%, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৯২%, হুগলিতে ৭০%, বীরভূমে ৮০%, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৮৪%, কলকাতায় ৯৯%। রাজ্যের সবক’টি জেলার মধ্যে অধিক বর্ষণ হয়েছে একমাত্র নদিয়াতেই। জোরালো শক্তিশালী নিম্নচাপ দানা না বাধলে এ পরিস্থিতি থেকে রেহাই মিলবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.