Advertisement
Advertisement

Breaking News

নগর পরিক্রমা

দোলের প্রস্তুতি নবদ্বীপে, নিয়ম মেনে ৭ দিনের নগর পরিক্রমা শুরু দেশি-বিদেশি ভক্তদের

ভাষাভাষীর ভিত্তিতে সদস্যদের ৬ টি দলে ভাগ করে শুরু হয়েছে যাত্রা।

Ahead of the festival of colour, Dol Iscon,Nabadwip starts their rituals
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 28, 2020 2:07 pm
  • Updated:February 28, 2020 2:07 pm  

বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: হেঁটে ৭২ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করা। নিয়ম মেনে প্রতি বছর দোল উৎসবের আগে এই পথ পরিক্রমায় শামিল হন মায়াপুরের ইসকনের ভক্তবৃন্দ। এবারও বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হল সেই যাত্রা। সাতদিন ধরে টানা চলবে এই মণ্ডল পরিক্রমা। পদযাত্রায় অংশ নিয়েছে দেশি-বিদেশি মোট হাজার ১২ ভক্ত।

সন্ন্যাস গ্রহণের আগে নবদ্বীপের যেসব জায়গায় নিমাই অর্থাৎ শ্রীচৈতন্যদেবের যাতায়াত ছিল, সেই সমস্ত জায়গায় সংকীর্তন সহযোগে পরিক্রমার মধ্যে দিয়ে নবদ্বীপে দোল উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। কারণ একটাই, নবদ্বীপ-মায়াপুরের দোল যত না শ্রীকৃষ্ণের, তার থেকে অনেক বেশি শ্রীচৈতন্যদেবের। তাঁর আবির্ভাব তিথি পালনই হল এখানকার দোলের মূল আকর্ষণ। দোলের আগে সাতদিন, পাঁচদিন বা তিনদিন ধরে চলে পরিক্রমা। নিতান্তই পথ হাঁটতে কেউ অক্ষম হলে অন্তত একটি দিন – চৈতন্যধাম নবদ্বীপের ভগ্ন দেউল, নদীর পাড়, প্রান্তর, পাড়া গাঁ ছুঁয়ে যাওয়ার রীতিও আছে। 

Advertisement

[আরও পড়ুন: ক্রাইম থ্রিলার দেখে অনুকরণের নেশা, গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে মৃত্যু স্কুলপডু়য়ার]

নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা করতেই দোলে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজার হাজার ভক্ত। মোট ছ’টি দল পৃথকভাবে শুরু করেছে পরিক্রমা। মায়াপুর ইসকনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানিয়েছেন, “বিশ্বের শতাধিক দেশ থেকে আসা মোট বারো হাজার দেশি, বিদেশি ভক্তকে নিয়ে আমাদের পরিক্রমা শুরু হয়েছে। কাজের সুবিধার জন্য এদের ছ’টি দলে ভাগ করা হয়েছে। টানা সাতদিন, ছ’রাত ধরে চলবে পরিক্রমা। আগামী চার মার্চ আমাদের পরিক্রমা শেষ হবে।” সূত্রের খবর, ভাষার ভিত্তিতে ভাগ করা হয়েছে ইসকনের পাঁচটি পরিক্রমা দলকে। কেবলমাত্র বিদেশি ভক্তদের নিয়ে একটি দল। পরিক্রমায় সেই দলটি ‘ইন্টারন্যাশনাল’ নামে চিহ্নিত। এবছর দেড় হাজার ভক্ত ওই দলে সামিল হয়েছেন। হিন্দিভাষীদের জন্য করা হয়েছে একটি পৃথক দল। ওই দলে রয়েছেন প্রায় দু’হাজার ভক্ত। ‘গীতাকোর্স ভক্তবৃন্দ’ নামে রয়েছে বাংলাভাষীদের একটি দল, যাতে দুই বাংলার সঙ্গে অসম, ত্রিপুরার বাঙালিরা শামিল। গৃহী ভক্তদের জন্য ‘নামহট্ট’ নামে একটি দল রয়েছে। সেই দলে রয়েছেন প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষ। রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানাচ্ছেন, “ভাষার জন্য প্রথমদিকে খুব অসুবিধা হত। যেমন, রাশিয়ানরা অন্য কোনও ভাষায় স্বচ্ছন্দ নন। তাই, শুধু রাশিয়ানদের জন্য রয়েছে একটি পৃথক দল। অন্যদের সঙ্গে ওদের পরিক্রমায় নিয়ে বের হলে উভয় পক্ষই অসুবিধায় পড়তেন। তাই ভাষার ভিত্তিতে এতগুলো দলে ভাগ করা হয়েছে।”

nabadwip-dol-prep

ইসকন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দিন দিন পরিক্রমায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বাড়ছেl প্রতিদিন পদযাত্রা শুরু হচ্ছে সকাল ছ’টা থেকে। প্রথম দিনে পাঁচটি দল বিভিন্ন দিকে বেরিয়েছে। প্রথম দলটি ছিল ইন্টারন্যাশনাল। বিশ্বের নানা দেশের কয়েক হাজার পুরুষ ও মহিলা এদিন মায়াপুর তারণপুরঘাট থেকে নৌকায় করে গঙ্গা হয়ে জলঙ্গি পেরিয়ে পৌঁছান সুবর্ণবিহার। সেখান থেকে কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে পঞ্চাননতলা। সেখানে জলখাবারের ব্যবস্থা। তারপর পায়ে পায়ে হরিহরক্ষেত্র। সেখানেই এদিনের রাত্রিবাস। মাঝপথেই মধ্যহ্নভোজ। পরদিন ফের যাত্রা শুরু হবে চৈতন্যধামের অন্য কোনও প্রান্তে। পরিক্রমার জন্য মোট ছ’টি জায়গায় রাতে থাকার জন্য শিবির করা হয়েছে। 

[আরও পড়ুন: নাম না করে তৃণমূলকে বৃহন্নলা বলে আক্রমণ, ফের কুকথা সায়ন্তনের]

ইসকনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাসের কথায়, “সেপ্টেম্বর মাস থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। মোট দেড় হাজার লোক পরিক্রমার নেপথ্যে কাজ করেন। এতগুলি দলের জলখাবার, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারের যাবতীয় রান্না করা হয় মায়াপুরে। তারপর ট্রাকে করে সেই খাবার বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়। বিভিন্ন দলের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকম খাদ্য সামগ্রী।” জানা গিয়েছে, সকালের জলখাবারে সাধারণত ফল, খিচুড়ি, চপ, চাউমিন, ফ্রুটজুস, বেলের সরবত থাকছে। সকাল ন’টা থেকে দশটার মধ্যে জলখাবার। মধ্যাহ্নভোজন দুটো থেকে তিনটের মধ্যে। তাতে ডাল-ভাত, সবজি, নানারকম নিরামিষ পদ, পায়েস, মিষ্টি ও একটা ফল থাকে। রাতে হালকা খাবার – শুধু মুড়ি আর দুধ। তবে হিন্দিবলয়ের ভক্তদের জন্য ভাতের বদলে মেনুতে থাকছে চাপাটি। ইন্টারন্যাশনাল দলে রয়েছে ‘বেকড ব্রেড’ বা রাশিয়ানদের ব্রাউন ব্রেড।

সাতদিন ধরে নবদ্বীপের ন’টি দ্বীপ পরিক্রমা করা হবে। পরিক্রমা উপলক্ষে দেশি-বিদেশি ভক্তের সমাগমে সরগরম নবদ্বীপ-মায়াপুর। নবদ্বীপে দোল পূর্ণিমার নাম গৌড় পূর্ণিমা। এখানকার গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের সভাপতি অদ্বৈত দাস বলছেন, “নবদ্বীপ এবং সংলগ্ন এলাকার যেসব জায়গায় চৈতন্যদেব তাঁর প্রাক সন্ন্যাস পর্বে লীলা করেছেন, পরিক্রমায় সেই সব স্থানেই ভক্তরা যান। বিভিন্ন মঠ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ওই পরিক্রমা শেষ করেন। নবদ্বীপের দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠ এবং কেশবজি গৌড়ীয় মঠ থেকে এবারও বের হচ্ছে বিরাট পরিক্রমা।”

ছবি: সঞ্জিত ঘোষ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement