ধীমান রায়, কাটোয়া: শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন দেড় দশক হয়ে গেল। শরীরে বার্ধক্য থাবা বসিয়েছে। কিন্তু আজও এলাকার ছাত্রছাত্রীদের জীবনে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে রাখতে অক্লান্ত সুজিত চট্টোপাধ্যায়। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের রামনগর গ্রামের ৭৬ বছরের সুজিত স্যার নিজের স্বপ্নপূরণের অদম্য ইচ্ছা আর সঞ্চিত অর্থ দিয়ে নিজের বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’। নবম,দশম
শ্রেণি থেকে স্নাতকস্তর পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের তিনি পড়ান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। না, একটু ভুল বলা হল। বছরে দু টাকা গুরুদক্ষিণার বিনিময়ে সুজিত স্যার বিতরণ করেন তাঁর অর্জিত জ্ঞান, সঞ্চিত অভিজ্ঞতা। শাস্ত্র বলে, গুরুদক্ষিণা ছাড়া কোনও শিক্ষাই সম্পূর্ণ হয় না। তাই ছাত্রছাত্রীদের থেকে দু টাকাই গ্রহণ করেন তিনি।
উত্তর রামনগর গ্রামের বাসিন্দা সুজিত চট্টোপাধ্যায় ১৯৬৫ সালে নিজের গ্রামেরই হাইস্কুলে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন।স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শিক্ষকতার জীবনে তিনি কখনও ছুটি নেননি। ১৫ বছর আগে তিনি শিক্ষকতা থেকে অবসর নেন। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী মীরাদেবী।
এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক ছেলে প্রসেনজিৎ কর্মসূত্রে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বাইরে থাকেন। তবে নিজের গ্রাম ও গ্রামের মানুষদের ছেড়ে দু’দিনও বাইরে কাটানোর কথা ভাবতে পারেন না সুজিতবাবু। নিজেকে ‘ফকির’ই বলেন তিনি। আর তাই পাঠশালার নামও রেখেছেন ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’। তাঁর কথায়, ”আমরা খালি হাতে পৃথিবীতে আসি। যেতে হয় খালি হাতেই। শুধু রয়ে যায় আমাদের কর্ম।”সুজিত স্যারের পাঠশালায় দশম শ্রেণি থেকে স্নাতক স্তর পর্যন্ত রয়েছেন প্রায় সাড়ে তিনশ ছাত্রছাত্রী। সপ্তাহের কোনওদিন বিরাম নেই। পড়ুয়াদের ৩০,৩২ জনের দল পালা করে তিনি টিউশন পড়ান। সারাদিনে তার বিরাম নেই।
আউশগ্রাম এলাকা আদিবাসী সম্প্রদায় অধ্যুষিত। গরিব মানুষের বসবাস বেশি। অনেকেই টাকার অভাবে টিউশন পড়তে পারেনা। তাদের কাছে আদর্শ শিক্ষাগুরু সত্তরোর্ধ সুজিত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ”অর্ধশতাব্দীকাল ধরে শিক্ষকতা করছি। আমার অনেক ছাত্রছাত্রী আজ উচ্চপ্রতিষ্ঠিত। ভাল পড়াশোনা করে কেউ জীবনে প্রতিষ্ঠা পেলে, সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা।” স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শুধুমাত্র বিনা বেতনে টিউশন পড়ানো নয়, সুজিতবাবু রোগগ্রস্ত দুঃস্থ পরিবারের পাশেও দাঁড়ান। প্রতি বছর থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুঃস্থ শিশুদের জন্য আর্থিক সাহায্য তুলে দেন। নামমাত্র টিউশন ফি এবং নিজের পেনশনের সিংহভাগই তিনি ব্যয় করেন পরোপকারে। এমন এক শিক্ষকই তো আজকের দিনে প্রণম্য।
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.