ফাইল চিত্র।
সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো : পঞ্চায়েত ভোটের আগে গোষ্ঠীকোন্দল আর পুরনো নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভে এমনিতেই গোটা সংগঠন ছন্নছাড়া। তারমধ্যেই রাজ্য বিজেপির (BJP) সামনে আশঙ্কার ‘সিঁদুরে মেঘ’ ঘনাচ্ছে মতুয়া ভোটব্যাংক নিয়ে।
প্রতিশ্রুতি মতো সিএএ (CAA) প্রয়োগ এবং নাগরিকত্ব সংশোধন আইন চালু নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের গড়িমসিতে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ জমছিল রাজ্যের মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে। রবিবার ঠাকুরবাড়িতে দাঁড়িয়ে রাজ্য বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের উপর নিজের অসন্তোষ খুল্লামখুল্লা জানিয়ে দিলেন জাহাজ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর (Shantanu Thakur)। পাশাপাশি এই ইস্যুতে রাজ্য বিজেপির বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে খোঁচা দিতেও কসুর করেননি তিনি। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে মতুয়া সম্প্রদায়ের সমর্থনের পাল্লা কোন দিকে ঝুঁকবে, সে প্রশ্নের মুখে শান্তনুর জবাব, ‘‘এর উত্তর ভাল দেবেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। কী চলছে আর কী চলছে না, আমি সত্যিই কিছু জানি না। রাজ্যের নেতাদের জিজ্ঞাসা করা হোক। তাঁরাই বলতে পারবেন।’’
রবিবার ঠাকুরবাড়িতে রাস উৎসব উপলক্ষে মতুয়া মহাসংঘের পক্ষ থেকে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। মহাসংঘের সভাধিপতি হিসাবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁর সাংসদ কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। বৈঠকের শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। শান্তনু ঠাকুরের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সর্বদা মতুয়াদের পাশে আছেন। তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা আছে মতুয়াদের।’’ রাজ্য নেতৃত্বকে খোঁচা দেওয়ার পাশাপাশি আইনের বাধ্যবাধকতার কারণ দেখিয়ে অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের পাশেও দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে শান্তনুকে। তিনি বলেন, ‘‘সিএএ নিয়ে আমরা পজিটিভ। কেন্দ্রীয় সরকার একে আইনসম্মত করেছে। শুধু প্রয়োগটা বাকি আছে। আইনের বাধায় যা আটকে আছে।’’
এদিকে রাজ্য বিজেপির অন্যতম নেতা তথা দলের প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে লেখা চিঠি নিয়ে জলঘোলা অব্যাহত। এদিন এ বিষয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শোনা গিয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) মুখে। এদিন সকালে হেস্টিংস কার্যালয়ে দলের তন্তুবায় শাখার এক বৈঠকে হাজির ছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শোনার পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। এ সময় সায়ন্তন বসুর চিঠি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। দিলীপ বলেন, ‘‘নেতৃত্বকে দলের যে কোনও কর্মী চিঠি লিখতে পারেন। সায়ন্তন দীর্ঘদিন এ রাজ্যের বিজেপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কাছ থেকে দলকে দেখেছেন। তিনি তাঁর অনুভব জানিয়েছেন। দলীয় নেতৃত্ব খতিয়ে দেখবে।’’
রাজ্য বিজেপির অন্দরমহল সূত্রে খবর, প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও সায়ন্তনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত আদি বিজেপির অধিকাংশই। নিজেদের সেই সমর্থনের কথা নিজেদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানিয়ে দিতেও দ্বিধা করেননি অনেকে। জানা যাচ্ছে, আগামীদিনে লড়াই শুরু হলে পাশে থাকার কথা জানিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাচ্ছেন। যদিও এদিন এপ্রসঙ্গে মুখ খোলেননি সায়ন্তন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এরকম অনেক চিঠি পাঠিয়েছি। কোন চিঠি নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটা আগে আমাকে খতিয়ে দেখতে হবে। তবে আমি এখন নিজের গবেষণা ও লেখালিখির কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ফলে রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই।’’
উল্লেখ্য, সোমবারই খুলছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। অক্টোবর মাসের শেষ দিনে শীর্ষ আদালতে রয়েছে CAA সংক্রান্ত ২৩২টি মামলার শুনানি। তিন সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চে মামলাগুলি শুনবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.