স্টাফ রিপোর্টার: তৃণমূলের (TMC) সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে সংসদের খাদ্য এবং গণবণ্টন সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপার্সন করা হয়েছে বিজেপি (BJP) সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে (Locket Chatterjee)। সুদীপের মতো একজন প্রবীণ সাংসদকে সরিয়ে প্রথমবারের সাংসদ লকেটকে সংসদের এইরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটির মাথায় বসানো নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চোরাস্রোত তুঙ্গে। লকেট-ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতারা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, হুগলির এই সাংসদ যে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের যথেষ্ট গুডবুকে, তা এই পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট।
রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবির লকেট বিরোধী। সুকান্ত মজুমদারের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, লকেট রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদের অন্যতম দাবিদার। তঁাকে সংসদীয় কমিটির মাথায় বসিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বরং তঁার গুরুত্বই কমাতে চেয়েছেন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই গোষ্ঠী কোন্দলের কারণ রাজনৈতিক মহলের চর্চায় রয়েছেন লকেট। রাজ্য বিজেপির বিভিন্ন শিবিরের লড়াইয়ে তঁার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখা গিয়েছে। সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর লকেটকে ঘিরে বিজেপিতে গোষ্ঠী কোন্দল আরও তীব্র হয়েছে।
রাজ্য বিজেপির একটি বড় অংশ প্রায় প্রকাশ্যেই লকেটকে সভাপতি করার জন্য তৎপর। পুজোর পর অক্টোবরেই লকেট রাজ্য সভাপতি হতে পারেন বলে একটা জল্পনা এই মহল থেকে অনেকদিন ধরেই প্রচার করা হয়েছে। লকেট-ঘনিষ্ঠ এই শিবিরের প্রধান মুখ এক সময় ছিলেন সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়রা। অজ্ঞাত কারণে সায়ন্তন বসু কার্যত দলের বৃত্তের বাইরে। রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সহ-সভাপতি পদে থাকলেও কোণঠাসা হয়ে রয়েছেন। রাজুর বাড়ির পুজোয় এবার একমাত্র লকেটকেই দেখা গিয়েছে। রাজ্য পার্টিতে লকেট-ঘনিষ্ঠরা অনেকেই কোণঠাসা হলেও দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে হুগলির সাংসদের গ্রহণযোগ্যতা কমতে দেখা যায়নি।
সম্প্রতি উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে তঁাকে পর্যবেক্ষক করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও বিভিন্ন ইস্যুতে লকেটকে আলাদা করে বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের কাছে লকেটের এই গ্রহণযোগ্যতা নিঃসন্দেহে চাপে রাখে রাজ্য পার্টিতে ক্ষমতাসীন সুকান্ত মজুমদার-অমিতাভ চক্রবর্তীদের। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই লকেটকেও রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা যায়।
সংসদীয় কমিটির রদবদলে লকেটকে স্ট্যান্ডিং কমিটির শীর্ষপদে দেখে কিছুটা স্বস্তি সুকান্ত-অমিতাভ শিবিরে। এই শিবিরের বক্তব্য, লকেটকে যদি রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে বসানোর কোনও পরিকল্পনা মোদি-শাহদের থাকত, তা হলে তঁাকে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপার্সন করা হত না। এই শিবিরের দাবি, লকেট কার্যত নাকের বদলে নরুন পেয়েছেন। রাজ্য সভাপতির পদ পাওয়ার চেষ্টা চালানো লকেটকে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপার্সন করে বার্তা দিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। লকেট-শিবির অবশ্য সুকান্ত-অমিতাভ গোষ্ঠীর এই দাবিকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। তঁাদের মত, প্রথমবারের সাংসদ লকেটের স্ট্যান্ডিং কমিটির শীর্ষপদে আসাই বুঝিয়ে দেয় বাংলায় তঁার জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করার জন্য কতটা আগ্রহী মোদি-শাহরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.