স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা ও বাঁকুড়া: লাভ, সেক্স, মার্ডার!
এ যেন হলিউড থ্রিলার সিনেমার জমজমাট প্লট৷ আর উদয়ন-কাণ্ডে সেই প্লটের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বাঁকুড়া সদর থানার তদন্তকারীদের৷
কখনও খোঁজ মিলছে ছোট বেলার বান্ধবীর৷ কখনও দ্রূত বাড়ি বিক্রি করে ভোপাল ছাড়ার পরিকল্পনা৷ আবার কখনও শরীরের সুখ মেটাতে বিদেশ পাড়ির তথ্য৷ শনিবার সকালে উদয়নের ল্যাপটপ ঘেঁটে পূজা খাটোয়ানি নামে এক যুবতীর সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা৷ পুলিশি জেরা যাঁকে উদয়ন নিজের ছোটবেলার বান্ধবী বলে পরিচয় দিয়েছে৷ যদিও তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে এই পূজা উদয়নের ছোটবেলার বান্ধবী ছিল ঠিক৷ নবম শ্রেণি পর্যন্ত দু’জনের মধ্যে সম্পর্কও ছিল৷ তারপর কোনও অজ্ঞাত কারণে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়৷ ফের ২০১২ সালের শেষ দিকে উদয়নের সঙ্গে যোগাযোগ হয় পূজার৷ তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত এক বছর পূজার সঙ্গে উদয়নের সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ৷ দু’জন একাধিকবার দৈহিক সম্পর্কেও লিপ্ত হয়েছিল বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ৷ কিন্তু যে ছোটবেলার বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল সে কীভাবে ফিরে এল উদয়নের জীবনে সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর এখনও মেলেনি৷
উদয়নের জীবনে পূজার উপস্থিতি নিয়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ৷ গত একবছর ধরে উদয়ন-পূজার সম্পর্ক থাকলে আকাঙ্ক্ষা খুনের পিছনেও কি তাহলে তার মদত ছিল৷ নাকি পূজার জন্যই আকাঙ্ক্ষাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার চক্রান্ত করেছিল উদয়ন৷ কোনও ভাবে এই খুনের পিছনে মাস্টার মাইন্ড পূজা কি না তাও খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা৷ যদিও শনিবার সকাল পর্যন্ত পুলিশি জেরায় উদয়ন ঠিক কী কারণে আকাঙ্ক্ষাকে খুন করল তা নিয়ে মুখ খোলেনি৷
এক তদন্তকারী জানিয়েছেন, উদয়নের ল্যাপটপ হাতে আসার পর থেকে এত নারীসঙ্গ ও রহস্যমোড়া তথ্য সামনে এসেছে যে উদয়নের তথ্যের উপর পুরোপুরি বিশ্বাস রাখা সম্ভব হচ্ছে না৷ তবে আকাঙ্ক্ষার উপস্থিতিতে কীভাবে পূজা উদয়নের জীবনের অংশ হয়ে উঠল সেটা জানাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা৷
ইতিমধ্যে ভোপাল পুলিশের সাহায্য নিয়ে পূজার বাড়ি ও পরিবারের সদস্যদের সম্বন্ধে তথ্য জোগাড় শুরু করেছে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ৷ দ্রূত ভোপালে গিয়ে আকাঙ্ক্ষা খুনের জট ছাড়ানোর জন্য তাঁরা পূজাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলেও জানা গিয়েছে৷ পূজার তথ্যের পাশাপাশি পুলিশকে আরও একটি তথ্য চিন্তায় রেখেছে৷ তা হল উদয়নের যৌনতার স্বাদ পূরণের ইচ্ছা৷ তদন্তকারীদের প্রথমে ধারণা হয়েছিল অর্থ জোগাড় করে বিদেশ ঘুরতে ভালবাসত উদয়ন৷ কিন্ত্ত এখন জানা যাচ্ছে উদয়নের বিদেশ পাড়ির মূল উদ্দেশ্যই ছিল শুধুমাত্র উদ্দাম যৌনতার স্বাদ নেওয়া৷ সেই কারণেই উদয়ন সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম গিয়েছিল৷ কারণ এই সব দেশে যৌনতা নিয়ে গোড়ামি নেই৷ ‘ওপেন সেক্স’-কে পছন্দ করা উদয়ন এই সব দেশে গিয়ে একাধিক যৌনকর্মীর কাছ থেকে যৌনজ্বালা মিটিয়েছে বলে নিজেই স্বীকার করে নিয়েছে৷ বিদেশের পাঁচতারা হোটেলে এসকর্ট সার্ভিস ডেকে এনে সেখানে রীতিমতো টাকা ওড়াত সে৷
তদন্তকারীদের অনুমান, উদয়ন অন্তত ১৫ জন মেয়ের সঙ্গে ভোপালেই দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত ছিল৷ মিলেছে একাধিক ‘কল গার্ল’ সম্বন্ধে তথ্য৷ সে ‘সেক্স অ্যাডিক্ট’ ছিল বলেই অনুমান পুলিশের৷ যৌন সঙ্গমের পর বান্ধবীদের নগ্ন, অর্ধনগ্ন ছবি উদয়ন নিজের ল্যাপটপে রেখে দেওয়া প্রসঙ্গে তদন্তকারীদের অনুমান, এটা হয় নিছকই বিকৃত যৌন লালসার মানসিকতা অথবা খুব সচেতনভাবে ভবিষ্যতের সমস্যা এড়াতে বান্ধবীদের ব্ল্যাকমেল করে টাকা লুঠের পরিকল্পনা৷ এরই মধ্যে ভোপালে নিজের বাড়ি মাত্র দু’মাসের মধ্যে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল উদয়ন৷ কিন্তু কেন? তদন্তকারীদের অনুমান, আকাঙ্ক্ষার দেহ বাড়ির ভিতর সিমেণ্টে জমাট বাঁধা অবস্থায় বিক্রি করে দিয়ে সে দ্রূত দেশ ছাড়তে চেয়েছিল৷ বাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে বিদেশে গিয়ে যে নিজের উদ্দাম জীবনের সঙ্গে যৌনতার পূর্ণ স্বাদ নিতে চেয়েছিল৷ তদন্তকারীরা জানাতে চাইছেন উদয়নের এই ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা সম্বন্ধে বান্ধবী পূজা কতটা জানত৷ শনিবার ভোপাল পুলিশের কনস্টেবল প্রদীপ মিনা আসেন বাঁকুড়া সদর থানায়৷ সেখানে মুখবন্ধ খামে আকাঙ্ক্ষার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জমা দেন৷ এদিন প্রদীপবাবু যখন তদন্ত নিয়ে কথা বলছেন তখন উদয়ন লকআপের মধ্যে থেকে শুনেছেন তদন্তের গতিপ্রকৃতি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.