সৌরভ মাজি, বর্ধমান: কৃষক পরিবার। ধানের শীষেই জড়িয়ে কৃষক পরিবারের প্রাণ৷ সেখানেই লুকিয়ে থাকেন মা লক্ষ্মী৷ কৃষক পরিবারের প্রধান দেবী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন মা লক্ষ্মী৷ ফলে, প্রাচীন রীতি অনুযায়ী এখানে মেয়ে লক্ষ্মীর জন্য কৈলাস যাওয়ার পথে আরও দিন চারেক অপেক্ষা করতে হয় মা দুর্গাকে৷ গ্রামে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হলেও কুলদেবী লক্ষ্মীপুজো না হওয়া পর্যন্ত বিসর্জন হয় না৷ প্রায় ৪৩ বছর ধরে এমনই ব্যতিক্রমী রেওয়াজ চালিয়ে আসছেন পূর্ব বর্ধমানের গলসির পলাশি গ্রামের বাসিন্দারা৷
পলাশি গ্রাম৷ সব মিলিয়ে কয়েকশো কৃষক পরিবারের বাস৷ গ্রামের এক প্রান্তে রয়েছে একটি দুর্গা মন্দির৷ পাশেই লক্ষ্মী মন্দির৷ গত ৪৩ বছর ধরে গ্রামে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হচ্ছে৷ পাশাপাশি, লক্ষ্মীপুজোও হয় সাড়ম্বরে। কিন্তু কোনওবারই দেবী দুর্গা আগে মন্দির ছেড়ে চলে যান না৷ মেয়ে লক্ষ্মীর আরাধনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় দেবী দুর্গাকে। লক্ষ্মীকে সঙ্গে নিয়ে তবেই কৈলাসে যেতে পারেন পলাশি গ্রামের দুর্গা।
[রাতে রেললাইনে বসে গল্প! ট্রেনের ধাক্কায় দুই বন্ধুর মৃত্যু]
কিন্তু কেন এই রেওয়াজ? পলাশি অরুণোদয় সংঘের পুজোর আয়োজনদের দাবি, গ্রামের সবাই কৃষিজীবী৷ ধান তাঁদের কাছে মা লক্ষ্মী। মা দুর্গার সঙ্গে লক্ষ্মীও থাকেন। তাই পুজোর পর দেবী দুর্গার সঙ্গে একবার বিসর্জন দিতে হয় মা লক্ষ্মীর। আবার লক্ষ্মী পুজোর পর হয় তার নিরঞ্জন। কিন্তু একবার বিসর্জন দেওয়ার পর ফের মা লক্ষ্মীকে বিসর্জন দিতে চান না তাঁরা। তাই মা দুর্গাকে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত মন্দিরে রেখে দেওয়া হয়। মা লক্ষ্মীর আরাধনার পর একসঙ্গে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
[দোকানে মদের আসর, প্রতিবাদ করে দেওরের হাতে আক্রান্ত পুলিশকর্মীর স্ত্রী]
গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামে টানা ১০দিনই মা দুর্গার আরাধনা চলে। গ্রামবাসী বিশ্বজিৎ সোম, প্রফুল্ল সোমরা জানান, দুর্গাপুজোর উপাচারেই ব্যতিক্রমী এই গ্রাম। তাঁরা পশুবলি প্রথার বিরোধী। তাই গ্রামে অষ্টমীতে মন্ডা বলি দেওয়ার প্রথা রয়েছে। রাজীববাবু জানান, বায়না দিয়ে প্রায় দুই কেজি ওজনের মন্ডা বানানো হয়। তারপর তা হাত দিয়ে বলি দেওয়া হয়। এখানে বলিদানে খাঁড়া ব্যবহার করা হয় না। আর পাঁচটা গ্রাম যখন দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে লক্ষ্মীপুজো নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তখন পলাশি গ্রাম দুর্গার আরাধনার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্মীর আরাধনার প্রস্তুতি নেয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.