সংগ্রাম সিংহ রায়, শিলিগুড়ি: টিকল না অহংকার৷ ৪০ বছরের ক্ষমতার মোহ ভাঙল বাম নেতৃত্বের৷ তৃণমূল ও বিজেপির বাড়বাড়ন্তের যুগেও উত্তরবঙ্গে টিমটিম করে বামেদের ‘পঞ্চায়েতি রাজ৷’ ছিল, স্থানীয় নেতৃত্বের অসম্ভব দম্ভ৷ কিন্তু, ‘সবার কী সমান যায়!’ টানা চার দশক পর সবুজ ঝড়ে হঠাৎ নিভল বামেদের দীর্ঘ ক্ষমতা প্রদীপ৷ ৪০ বছর পর বামেদের হাতছাড়া হল শিলিগুড়ির মাটিগাড়া ব্লকের আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েত৷
আজ, বুধবার বামেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে তৃণমূল৷ শাসকদলের অনাস্থা প্রস্তাব পেশ হতেই লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে বেরিয়ে যান বাম নেতৃত্ব৷ এদিন সিপিএমের প্রধান অসিত নন্দীর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন তৃণমূলের ১৩ জন সদস্য৷ সদ্য সিপিএম ছেড়ে বেরিয়ে আসা দুই পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনেন৷ এদিনের এই অনাস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখেনি স্থানীয় বাম নেতৃত্ব৷ ফলে, অনায়াসে পঞ্চায়েত নিজেদের কব্জায় আনে শাসক তৃণমূল৷
শিলিগুড়ির মাটিগাড়া ব্লকের আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েত৷ মোট সদস্যপদের সংখ্যা ৩০টি৷ তৃণমূলের দখলে ছিল ১৪টি৷ কিন্তু, ফলাফল ঘোষণার পর তৃণমূলের এক সদস্যের মৃত্যু হয়৷ শুরু হয় পঞ্চায়েত দখলের নয়া সমীকরণ৷ তৃণমূলের শক্তি কমে দাঁড়ায় ১৩টিতে৷ বাকি আসনের দখল ছিল কংগ্রেস-বাম জোটের৷ কিন্তু, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন দুই পঞ্চায়েত সদস্য৷ ১৩ থেকে শক্তি বেড়ে দাঁড়ায় ১৫টিতে৷ ফলে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে বেশি কষ্ট করতে হয়নি তৃণমূলের৷ পঞ্চায়েত সদস্যের মৃত্যুর কারণে মোট ২৯টি আসনে এদিন অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়৷ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা মাথায় রেখে অনাস্থা ভোটে পরাজয়ের আগেই হাল ছেড়ে দেয় বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ ফলে, তৃণমূলের ১৫ জন সদস্য অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন৷ অবশেষে বিডিও প্রস্তাব পাস করেন৷ ফলে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের লাগাম টানে তৃণমূল৷ আলোচনা করে পরবর্তী প্রধান ঠিক করা হবে বলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷
[রণক্ষেত্র আমডাঙা: রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বলি তিন, স্কুল বন্ধের নির্দেশ প্রশাসনের]
এদিনের এই পরাজয় প্রসঙ্গে অসিত নন্দী বলেন, ‘‘ভোটে হেরেও গায়ের জোরে তৃণমূল পঞ্চায়েত দখল করে নিয়েছে৷ দল ভাঙিয়ে পঞ্চায়েত গঠন করেছে রাজ্যের শাসকদল৷ মানুষের সমর্থনে আমরা পঞ্চায়েত গড়েছিলাম৷ কিন্তু, মানুষের রায়কে উপেক্ষা করে আজ তৃণমূল ক্ষমতায দখলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে৷’’ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের বিরোধী দলনেতা কাজল ঘোষ, বামেদের সমস্ত অভিযোগ উড়েয়ে বলেন, ‘‘ওরা কাজ করতে পারছিল না৷ কোটি কোটি টাকা উন্নয়নের জন্য পাঠানো হলেও কিছুই করতে পারেনি বাম-কংগ্রেস জোটের বোর্ড৷ ফলে, আমরা ওই পঞ্চায়েত দখলে করে দেখিয়ে দেব, কীভাবে এলাকায় উন্নয়ন করতে হয়৷’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.