কৃষ্ণকুমার দাস: তমলুকের দুই সহকর্মী করোনা আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধের ভাবনা শুরু করেছেন রাজ্যের প্রায় দেড় লক্ষ হাতুড়ে ডাক্তার। মঙ্গলবার থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমার হাতুড়ে ডাক্তাররা চেম্বার বন্ধ করেছেন। করোনা সংক্রমণের ভয়ে রোগী দেখছেন না দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হাওড়া ও হুগলির হাতুড়ে চিকিৎসকদের একাংশ। বেলেঘাটা আইডিতে নিয়ে যাওয়া তমলুকের দুই সহকর্মীর পরবর্তী রিপোর্টের অপেক্ষায় এখন হাতুড়ে ডাক্তারদের রাজ্য কমিটি। মঙ্গলবার পল্লী চিকিৎসক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক অরুণ ঘোষ জানান, “ইতিমধ্যে দু’জন গ্রামীণ ডাক্তারের করোনা পজিটিভ, আরও হলে আমাদের পরিষেবা বন্ধ করতেই হবে। করোনা হলে পরিবারের নিরাপত্তা কোথায়? চিকিৎসক, সাফাইকর্মী, আশা কর্মীদের দশ লাখ টাকার বিমা আছে। কিন্তু আমাদের এই দেড় লাখ পল্লি চিকিৎসকের জন্য কোন কিছুই নেই।”
বাংলায় গ্রামীণ ক্ষেত্রের হাতুড়ে ডাক্তারদের লকডাউনের মধ্যেও পরিষেবা চালিয়ে যেতে আবেদন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা বা শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ, প্রাইভেট চেম্বারেও বসছেন না অধিকাংশ এমবিবিএস ডাক্তার। সেখানে গ্রামীণ ক্ষেত্রে এই হাতুড়েরাই হাজার হাজার মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রথমে সবংয়ে এবং পরে তমলুকের দুই হাতুড়ে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে শঙ্কিত গ্রামের এই সার্টিফিকেটহীন ডাক্তাররা।
তাদের অভিযোগ, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী সমস্ত পোশাক,মাস্ক পরেও তিনফুট দূরে দাঁড়িয়ে বেলেঘাটা বা বাঙুরে চিকিৎসকরা রোগী দেখেন। সেখানে হাতুড়েরা নিজেরাই রোগীর প্রেসার মাপেন, পালস দেখেন, চেম্বারে সরাসরি শারিরীক সংস্পর্শে আসেন। রোগীদের সঙ্গে কার্যত পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাওয়ায় ‘সামাজিক দূরত্ব’ মানা সম্ভব হয় না হাতুড়েদের। বস্তুত এই কারণেই এই ডাক্তাররাই নিশ্চিন্তে বলে দিতে পারেন, কোন পরিবারের কে কবে বিদেশ বা ভিনরাজ্য থেকে এসেছে। তাই বহিরাগতদের শনাক্তকরণ করতে অনেকক্ষেত্রে হাতুড়েদের সাহায্য নিচ্ছে। কিন্তু লকডাউনের দু’সপ্তাহ পরে মারণ করোনা সংক্রমণের ভয়ে রীতিমতো ভয়ে কাটা হয়ে গিয়েছেন রাজ্যের অধিকাংশ হাতুড়ে। পল্লী চিকিৎসকদের রাজ্য সভাপতি দিলীপ পাল এদিন স্বীকার করেন, “ভিন রাজ্য থেকে আসা রোগীর সংস্পর্শ থেকে দু-তিনজন সহকর্মী আক্রান্ত হওয়া মাত্রই আতঙ্কিত হয়েছেন অন্যরা। দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার কোয়াক-ডাক্তারদের একটা বড় অংশ ভয়ে চেম্বারে বসছেন না।” বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে জেলাপ্রশাসনকে জানিয়েছেন দিলীপ।
উল্লেখ, দাসপুর, দাঁতন, তমলুক—সহ বিভিন্ন গ্রামীণ ক্ষেত্রে গত কয়েকদিনে করোনা আক্রান্ত রোগী দেখার পর নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে হাতুড়ে ডাক্তারদের। হাতুড়েদের দুই নেতা দিলীপ ও অরুণ বাবুর অভিযোগ, “ডাক্তার-নার্স তো বটেই আশাকর্মী, সাফাইকর্মীরও ১০ লক্ষ বিমা আছে। কিন্তু আমরা সরকারের হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে সেবা করছি, কিন্তু আমাদের কোনও নিরাপত্তা নেই।” হাতুড়েদের পরিবারের সদস্যরাই তাঁদের রোগী দেখতে আপত্তি করছেন বলে স্বীকার করেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক। IMA’র সর্বভারতীয় সভাপতি ডাঃ শান্তনু সেন জানিয়েছেন, “লকডাউনের মধ্যেও রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং এমবিবিএস ডাক্তাররা চেম্বার থেকে যে চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন তা রাজ্যবাসীর জন্য যথেষ্ট।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.