সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্টেলে ঢুকে বামপন্থী ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা চালানোর ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। ধৃত অচিন্ত্য বাগদি নিজেকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য বলে বরাবরই দাবি করে এসেছেন। তাঁরই সঙ্গী সাবির আলিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাম ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের কঠিন শাস্তির দাবিতে থানার সামনে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। তবে ধৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ধন্দ কাটছে না। এবিভিপিকে আড়াল করার জন্যই কি টিএমসিপি নিজের ঘাড়ে দায় নিল? প্রশ্ন উঠছে।
বিদ্যাভবন হস্টেলে ঢুকে ‘বহিরাগতরা’ তাণ্ডব চালিয়েছে, তাঁরা সকলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া বলে গোড়া থেকে অভিযোগ করেছেন টিএমসিপি সদস্য অচিন্ত্য বাগদি। তিনি নিজেকে টিএমসিপি বলে দাবি করেছেন, অথচ তাঁর বিরুদ্ধে যখন এসএফআইয়ের উপর হামলার অভিযোগ উঠছে, তখন তিনি সেই অভিযোগের তির ঘুরিয়ে দিচ্ছেন ‘বহিরাগত’দের দিকে। অভিযোগ করছেন, ”বিদ্যাভবনের হস্টেলে যারা ঢুকেছিল, তারা যাদবপুরের পড়ুয়া। তা দেখে আমার জুনিয়র সুলভ কর্মকার তাঁদের বাধা দেয় এবং আমাকে ফোন করে খবরটি জানায়। আমি এবিভিপি করি না, বরাবর টিএমসিপির সদস্য।” বারবারই তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে নিজেকে টিএমসিপির সদস্য বলে দাবি করেছেন। আবার জেলা তৃণমূলের দাবি, অচিন্ত্য তাঁদের দলের নন।
প্রশ্ন উঠছে, হামলাকারীরা সকলেই যদি ‘বহিরাগত’ হন, তবে অচিন্ত্য বাগদি নিজে কেন গ্রেপ্তার হলেন? ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি, এই পরিস্থিতিতে বামপন্থীদের উপর হামলার অভিযোগের তির এবিভিপির দিকে ঘুরিয়ে দিলে, আখেরে তো লাভ তৃণমূলেরই। তাই কি অচিন্ত্যের সঙ্গে দলের সম্পর্ক ছেঁটে ফেলছে জেলা তৃণমূল?
অন্যদিকে, এবিভিপির সদস্য অপূর্ব শরদেরও বক্তব্য, এসএফআইয়ের উপর হামলার ঘটনার সঙ্গে কোনওভাবেই জড়িত নয় তাঁদের সংগঠন। যদি আক্রান্ত এসএফআই সদস্যরা এর স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ দিতে না পারেন তাহলে তাঁদের ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে এবিভিপির বিরুদ্ধে মানহানিকর অভিযোগ তোলার জন্য। তাহলে হামলাকারী কারা? এই প্রশ্নের উত্তর বেশ সুকৌশলেই দিলেন অপূর্ব। বললেন, ”বিজেপি বিরোধী কেউ।” এই মন্তব্যের নানাবিধ ব্যাখ্যা হতেই পারে। তা হচ্ছেও। সরাসরি টিএমসিপি অথবা ‘বহিরাগত’র নাম না নিয়ে কৌশলী উত্তর কেন দিচ্ছেন? এই প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাহলে কি অচিন্ত্য, সাবিররা টিএমসিপি থেকে সদ্য এবিভিপিতে নাম লিখিয়েছে? আর নতুন সদস্যদের ‘অ্যাকশন’-এর দায় নেবে না বলেই কি এবিভিপির কৌশলী জবাব?
এবার আসা যাক বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের বক্তব্যে। হাসপাতালে ভরতি অর্থনীতির ছাত্র স্বপ্ননীল মুখোপাধ্যায় থেকে আক্রান্ত আরেক ছাত্র ফাল্গুনি পানের দাবি, বিদ্যাভবনে ঢুকে হামলা চালিয়েছে এবিভিপি। তাঁরাও এই বক্তব্যে অনড়। এবং যুক্তি হিসেবেও তাঁরা তুলে ধরছেন অকাট্য বিষয়। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বিশ্বভারতীতে CAA-র সমর্থনে আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। তারই পালটায় এবিভিপিই এমন হামলা বলে মনে করছেন তাঁরা। যে যুক্তি যথেষ্ট জোরাল। সবমিলিয়ে, বিশ্বভারতীতে রাতে হামলাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে এখনও ধন্দ কাটছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.