অর্ণব দাস: মহাশূণ্যে নিরন্তর যে মহাজাগতিক কার্যকলাপ হয়ে চলেছে, ছোট থেকে তা জানার তীব্র ইচ্ছা ছিল উত্তর চব্বিশ পরগনার নিমতার উত্তর প্রতাপগড়ের বাসিন্দা উজ্জ্বল অধিকারীর। ক্রমে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই অজানাকে জানার ইচ্ছা তীব্রতর হতে শুরু করে। উজ্জ্বল স্থির করে, বড় হয়ে মহাকাশবিজ্ঞানী হবে। কিন্তু, কেরিয়ারে হিসাবে বেছে নেয় এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংকে। তাতে কী, মনের কোণে অধরা স্বপ্ন সযত্নে লালন করে চলছিলেন তিনি। ক্রমে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে কনিষ্ঠতম এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার যুবক আবিষ্কার করেন গ্রহাণু। মেলে নাসার সিটিজেন সায়েন্টিস্ট স্বীকৃতি। ভারত বিভূষণ সম্মানও পেয়েছেন তিনি। এবার ডক্টরেট উপাধি-সহ বঙ্গ গৌরব সম্মানও পাচ্ছেন নিমতার উজ্জ্বল। এলাকার যুবকের এহেন উজ্জ্বল কৃতিত্বে গর্বিত পাড়া-প্রতিবেশীরা, তাঁর পরিবার তো বটেই।
নিমতার উত্তর প্রতাপগড়ের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে উজ্জ্বল উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন নিমতা হাই স্কুল থেকে। তারপর আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার পাস করে বেঙ্গালুরুতে একটি সংস্থায় কাজে যোগ দেন। পাশাপাশি এমবিএ-ও করেন তিনি। এছাড়া, বরাবরই তাঁর আগ্রহ ছিল অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এবং অ্যাস্ট্রোনমি বিষয়ে। মহাকাশ জানার এই স্বপ্ন থেকেই ২০১৮ সালে তিনি বেঙ্গালুরুর এমপি বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ সেন্টারে রিসার্চ স্কলার হিসাবে সুযোগ পান। একই সময়ে তিনি এরোস্পেস চার্টার্ড ইঞ্জিনিয়ারিংও পাস করেন।
মাত্র ২৭ বছর বয়সে কনিষ্ঠতম এরোস্পেস চার্টার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডে তাঁর নামও নথিভুক্ত হয়। এই কারণে একটি সংস্থার তরফে ভারত ভূষণের স্বীকৃতিও পান তিনি। প্রতি বছরই বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ বা কাজ করার অভিজ্ঞতা জানানো যায় নাসাকে। এই প্রকল্পে নিমতার উজ্জ্বল ২০২২ সালে নাসায় গ্রহাণু নিয়ে গবেষণা জমা করেন। সেই গবেষণায় তিনি পৃথিবীর চারপাশে আবর্তিত নতুন তিনটি গ্রহাণুর সন্ধান দিয়েছিলেন নাসাকে। এর পরই নাসার তরফে মেলে ‘সিটিজেন সায়েন্টিস্ট’-এর স্বীকৃতি। এই গ্রহাণু আবিষ্কারের কারণেই ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ডের তরফ থেকে তাকে ভারত বিভূষণ সম্মানেও সম্মানিত করা হয়েছিল। এবার এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অবদানের জন্য চলতি মাসে তাঁকে ডক্টরেট উপাধি দিতে চলেছে গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ট্রাস্ট। সেপ্টেম্বরে বঙ্গ গৌরব সম্মানেও সম্মানিত করা হবে তাঁকে। ঘরের ছেলের এত সব স্বীকৃতিতে স্বভাবতই খুশি তাঁর পরিবার।
আগামী ২২ আগস্ট ডক্টরেট উপাধি এবং ২৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গ গৌরব সম্মান প্রদান করা হবে। নিজের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে উজ্জ্বল বলেন, ‘‘প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম স্যরের অনুপ্রেরণায় এরোস্পেস ফিল্ডে আসা। তবে, মা-বাবা না থাকলে আমি এই জায়গায় আসতে পারতাম না। বাবা নিজের চাকরি জীবনের ২৫তম বছরে পাওয়া একটি পদক বন্ধক রেখেই আমাকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভরতি করিয়েছিলেন। না হলে স্বপ্ন পূরণ হত না। নাসা যদি গবেষণার কাজে ডাকে তাহলে অবশ্যই যাব।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.