সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জমি-বাড়ি দখল করে গ্যারেজ ব্যবসা করার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠল আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতার বিরুদ্ধে। পুরুলিয়া পুর শহরের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে বি টি সরকার রোড এলাকায় অফিস ও গ্যারেজের ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা ) অজিতপ্রসাদ মাহাতোর বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় পুরুলিয়া সদর থানায় অভিযোগও হয়েছে। এমনকি হাই কোর্টের রায়ে ওই এলাকা খালি করার নির্দেশ দিলেও গ্যারেজ ব্যবসা চলছেই। পুর শহরের ওপর এভাবে জমি দখল করে ব্যবসা চলায় বিচারের আরজি নিয়ে পীড়িত পরিবার মঙ্গলবার পুরুলিয়া পুরসভায় অবস্থানে বসে।অজিতপ্রসাদ মাহাতোর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় জেলার রাজনৈতিক মহল-সহ পুরুলিয়াজুড়ে হইচই বেঁধে গিয়েছে। তবে এই অভিযোগ মানতে চাননি আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা।
চলতি বছরের ২ জুলাই ওই পীড়িত পরিবারের তরফে ৭০ বছরের বৃদ্ধ দুর্গাদাস গড়াই পুরুলিয়া সদর থানায় অবৈধভাবে বাস্তু জমি দখলে রেখে এবং বাড়ি এসে হুমকির অভিযোগ করেন। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে।” পীড়িত পরিবারের অর্থাৎ ৭০ বছর বয়সের দুর্গাদাস গড়াইয়ের ছেলে আর্যভট্ট গড়াই ও তার স্ত্রী সঙ্গীতা গড়াই এদিন পুরুলিয়া পুরসভায় অবস্থান বিক্ষোভ করার পর পুরুলিয়া পুরসভা জানিয়েছে, বি টি সরকার রোড এলাকায় যে গ্যারেজের ব্যবসা চলছে সেখানে কোন ট্রেড লাইসেন্স নেই। পুরুলিয়া পুর শহরের ওই এলাকায় যেখানে একটি অফিস ও গ্যারেজ ব্যবসা চলছে তার হোল্ডিং নাম্বার ৫৭।
এদিন পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, “সম্প্রতি পুরুলিয়া সদর থানার আইসি আমাকে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন ওই বি টি সরকার রোড এলাকায় ৫৭ হোল্ডিং নম্বরে গ্যারেজ ব্যবসার কোন অনুমোদন বা ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে কিনা। তার প্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে দেখি কোন ট্রেড লাইসেন্স নেই। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নোটিশ করব এবং পুরসভার ট্রেড লাইসেন্সের টিম ওখানে যাবে।” এদিন অবস্থানে বসা দুর্গাদাস গড়াইয়ের ছেলে আর্যভট্ট গড়াই বলেন, “পুরুলিয়া পুর শহরের বি টি সরকার রোড এলাকায় প্রায় ১৩ কাঠা জমি আমাদের। ওই জমিতে আমাদের বাড়িও রয়েছে। শহর পুরুলিয়ার দুলমি এলাকার বাসিন্দা অজিতপ্রসাদ মাহাতো ওই জমিতে একটি অফিস করে গ্যারেজ ব্যবসা চালাচ্ছেন। এর প্রেক্ষিতে আমরা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলে আদালতের রায় রয়েছে ওই এলাকা খালি করার। কিন্তু তিনি তা করেননি। আমরা এই মর্মে পুরুলিয়া সদর থানায় অভিযোগ করেছি। জমি দখল করে যেভাবে বেআইনিভাবে গ্যারেজ ব্যবসা চলছে তার বিচার চাইতে পুরসভায় অবস্থানে বসি।”
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জমি আগে ছিল বীরেন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সময় প্রফুল্ল কর্মকার বলে একজন ওখানে গ্যারেজ ব্যবসা করছিলেন। বর্তমানে তিনি মারা গিয়েছেন। কিন্তু এখনও তার নামে সেখানে বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ। ১৯৯৫ সাল নাগাদ দুর্গাদাস গড়াই ওই জমি বীরেন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ক্রয় করেন। আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত প্রসাদ মাহাতো বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই। সর্বৈব মিথ্যা। আগে যিনি এই জমির মালিক ছিলেন সেই সময় অর্থাৎ ১৯৯২ সাল থেকে আমি এখানে রয়েছি। এখানে আমার একটি অফিস আছে। আগের মালিক আমাকে এখানে থাকতে বলেছিলেন। গ্যারেজ ব্যবসার বিষয়টি একদমই ঠিক নয়। আমাদের বিভিন্ন লোকজন ওখানে সাইকেল-মোটরবাইক রাখেন। পুরসভা তদন্ত করতে চাইলে করবে।”
বিটি সরকার রোড এলাকারই বাসিন্দা দুর্গাদাস গড়াই পুরুলিয়ার সদর থানায় বাড়ি ও জমি দখলের যে অভিযোগ করেছেন সেখানে তিনি লিখেছেন, ট্রেড লাইসেন্স ছাড়ায় ওই গ্যারেজের ব্যবসা চলছে। তাছাড়া এখানকার বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে মৃত প্রফুল্ল কর্মকারের নামে। আর্যভট্ট গড়াই বলেন, “প্রফুল্ল কর্মকার মারা গিয়েছেন। কিন্তু তার নামে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ রয়ে গিয়েছে।হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার। কিন্তু আমি বিদ্যুৎ বিভাগকে বারবার বলেও কোন কাজ হয়নি।” ওই অভিযোগ পত্রে দুর্গাদাস গড়াই লিখেছেন, চলতি বছরের ২৯ জুন রাত ৮টা নাগাদ অজিতপ্রসাদ মাহাতো ও তার ছেলে বিশ্বজিৎ মাহাতো দলবল নিয়ে এসে চোখরাঙিয়ে যায়। মেরে ফেলার হুমকি দেয়। দুর্গাদাস গড়াই অভিযোগ পত্রে লিখেছেন, অজিতপ্রসাদ মাহাতো তার কাছে ৩ লক্ষ টাকা দাবি করেন। তাহলে তিনি এই জমি-বাড়ি ছেড়ে দেবেন বলেছিলেন। ভয় দেখিয়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নগদে নিয়েও নেয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.