সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিল্লিতে কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়া মুর্শিদাবাদের শ্রমিকদের উদ্ধার করলেন বহরমপুরের সাংসদ তথা লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরি। দিল্লি থেকে কালকা মেলে তাঁদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দেন তিনি। খবর পাঠালেন চিন্তিত পরিবারগুলির কাছে। আর তা জেনে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে মুর্শিদাবাদের নওদার শ্রমিক পরিবারগুলি।
কাজের খোঁজে বছর পাঁচেক আগে নওদার ত্রিমোহিনী গ্রাম থেকে ১২ জন কারিগর পাড়ি দিয়েছিলেন দিল্লিতে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে উত্তপ্ত উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ, মওজপুর এলাকায় ফ্যান তৈরির কারখানায় কাজ করতেন তাঁরা। সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে দিল্লি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আগে পর্যন্তও তাঁরা কেউ ভাবতে পারেননি যে এমন অশান্তি, উদ্বেগের মধ্যে পড়তে হবে। কিন্তু গত সপ্তাহের শেষ দিক থেকে জাফরাবাদ-সহ সংলগ্ন এলাকা কার্যত অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। এলাকায় লাগাতার হিংসার কারণে গৃহবন্দি হয়ে পড়েন তাঁরা। ইচ্ছে থাকলেও গ্রামের বাড়িতে ফেরার উপায় ছিল না। কারণ, পরিস্থিতি এতটাই অশান্ত যে বাইরে বেরনোর উপায় ছিল না। এসব জায়গা ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। ফলে বিপদ এবং উদ্বেগ বাড়ছিল।
এই খবর বাড়িতে পৌঁছতেই আপনজনরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এক যুবকের মা আফাতন বিবি বলেন, “আমার ছেলে হালিম শেখ দিল্লিতে আটকে রয়েছে। পাঁচ বছর ধরে ও দিল্লি থেকে যাতায়াত করছে। কিন্তু এখন খুব সমস্যায় রয়েছে। গত তিনদিনে ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারেনি হালিম। ফোন করে ও কাঁদছিল।” আরেক মহিলা মমতাজ বেওয়া জানিয়েছেন, বাড়ি ফেরা জন্য ছটফট করছে তাঁর দুই সন্তান। আলমগির শেখ ও সাহারুল শেখ নামে তাঁর দুই সন্তান দিল্লি থেকে বাড়ি না ফেরায় চিন্তায় নিজেও খেতে পারছেন না তিনি। সন্তান সেলিম শেখের দ্রুত বাড়ি ফেরার দিকে তাকিয়ে বসে রয়েছেন নুরজাহান বিবি। এদিকে নওদা ব্লকের কেদারচাঁদপুর – ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাবানা সুলতানার কথায়, “ত্রিমোহিনী এলাকার আওলাদ শেখ, হালিম, আলমগির, সাহারুল, জাব্বারুল, মিকারুল, জিয়ারুল, কলম শেখ, ফরিদ, সেলিম, সাদ্দাম, জহিরুল, ইমাজ, রবিউল ও এনটোন শেখ দিল্লিতে কাজ করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। এখন দিল্লিতে আটকে পড়েছেন তাঁরা। সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন পরিবারের লোকজন। পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।”
দিল্লির অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যে অসহায় শ্রমিকদের আটকে পড়ার খবর পৌঁছয় বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরির কানে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ফেরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডির সঙ্গে কথা বলে জাফরাবাদের গোন্ডা এলাকা থেকে তাঁদের উদ্ধারের আবেদন করেন। মন্ত্রীও তৎপর হয়ে বাংলার শ্রমিকদের নিরাপদে বাড়ি ফেরার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এরপর বুধবার রাতেই কালকা মেলে হাওড়ার উদ্দেশে রওনা দেন ১২ জন। তবে কাজ ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে বলে কিছুটা চিন্তিত তাঁরা। যদিও পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, আগে প্রাণ বাঁচিয়ে ঘরে ফিরুক, তারপর আয়ের উপায় ভাবা যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.