সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভালবাসার বর্ণনা তাঁর জীবনে দুরকম। একসময়ে ভালবাসার মানুষটাই একদিন তাঁর মুখে ছুঁড়ে মেরেছিল অ্যাসিড। অন্যদিকে আরেক ভালবাসার মানুষ সেই কঠিন সময়ে তাঁর হাত ধরেছিল শক্ত করে। ভরসা দিয়েছিল জীবনের বাকিটা পথ চলার। সেই অ্যাসিড আক্রান্ত (Acid Attack) তরুণী সঞ্চয়িতা যাদব গতকাল বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন “দুঃসময়ের বন্ধু” দমদমের বাসিন্দা শুভ্র দের সঙ্গে।
২০১৪ সালের ২২ অগাস্ট। জীবনের সেই কঠিন দিনটির দগদগে স্মৃতি আজও অক্ষত সঞ্চয়িতার কাছে। প্রেমের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন সঞ্চয়িতা। বেশ কয়েকদিন ধরেই মনোমালিন্য থাকায় প্রাক্তন প্রেমিককে জানান সেই কথা। প্রেমিকের বারবার বোঝানো সত্ত্বেও রাজি হননি সঞ্চয়িতা। ঝগড়া করে চলে আসার পথে রাস্তাতেই সঞ্চয়িতার মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে দেন তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক। যন্ত্রণা, চিৎকার, কাতর আর্তিতে সেদিন রাস্তায় ছটফট করেছিল বছর ২০’র তরুণী। সেই থেকে শুরু লড়াই। তবে লড়াইয়ে বন্ধু হিসেবে পাশে পেয়েছিলেন শুভ্র দে-কে। সঞ্চয়িতার প্রতি তাঁর ভাললাগা ছিল অনেক দিনের। টিউশনের (Tuition) ক্লাস থেকে জীবনের লড়াই সব জায়গাতেই পাশে থেকেছেন শুভ্র। অ্যাসিড আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালের খরচ, পুলিশের ঝামেলার সময় সঞ্চয়িতার হাত ছাড়েননি তিনি। এরপরই অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হয়. সাড়ে তিন বছর ধরে চলে কোর্টের লড়াই। ততদিনে গাঢ় হয়েছে শুভ্র ও সঞ্চয়িতার সম্পর্ক। এরই মাঝে ২০১২-তে বাবাকে হারায় সঞ্চয়িতা, কাঁধে ওঠে পরিবারের দায়িত্ব। ২০১৯-এ মাকেও হারান সঞ্চয়িতা। তখনই সঞ্চয়িতাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় শুভ্র।
শুভ্রর বাড়িতে তাঁর মা বিয়ের কথা প্রথমে মানতে না চাইলেও পরে রাজি হন এই সম্পর্কে। সঞ্চয়িতার সাহস, তাঁর লড়াই উদ্বুদ্ধ করে শুভ্রর মাকে। শুভ্রর বাবাও যথেষ্ট খুশি হন ছেলের এই সিদ্ধান্তে। বাবা- মা হারা সঞ্চয়িতাকে তাঁরা আপন করে নিতে চান। ফলে দীর্ঘ লড়াই শেষে মঙ্গলবার বিয়ে হয় শুভ্র ও সঞ্চয়িতার। মনোবিদদের দাবি, শুভ্রর এই সিদ্ধান্ত দৃষ্টান্ত হয়ে সমাজের কাছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.