অভিরূপ দাস: অ্যাসিড ঢেলে মুখ পুড়িয়ে দিয়েছিল কেউ। আগুনে পোড়ার মতো যন্ত্রণা ছিল টানা দেড় মাস।
ভয় নয়, বেঁচে থাকার রসদ পেতে সেই আগুনের আদল বদলানোর শপথ নিয়েছেন পারমিতা বেরা। সংসারের জোয়াল টানতে গলানো মোমে তাঁর আঙুলের কারসাজিই ভরসা।
২০১৫ সালের ২৯ মে’র অভিশপ্ত রাত। উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরনোর দিনেই জীবনে নেমে এসেছিল অন্ধকার। সে রাতে মা-ভাইয়ের সঙ্গে মেদিনীপুরের (Midnapore ) বাড়িতে শুয়ে ছিলেন তরুণী। তখনই ঘটে ভয়ংকর ঘটনাটি। অ্যাসিড ছিটকে লেগেছিল মা, ভাইয়ের গায়েও। অসহ্য যন্ত্রণা। কোমায় কাটানো জীবনের দীর্ঘতম মাস। যা কাটিয়ে আলোয় ফেরা কোনও রূপকথার চেয়ে কম কিছু নয়। সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেলেও আসল লড়াইটা শুরু হয় তার পর। নাক ঠোঁট সব গলে গিয়েছে। তা ঠিক করতে প্লাস্টিক সার্জারির বিপুল খরচ। জেঠতুতো দাদা দেবজিৎ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতাল থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের এমএ ক্লাস। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পারমিতা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। “১৭টা অস্ত্রোপচার হয়েছে আমার। অস্ত্রোপচারের ধকল সয়ে মরার মতো পড়ে থাকতাম”, জানিয়েছেন তরুণী। পুড়ে যাওয়া চামড়া ধীরে ধীরে বদলে ফেলা যেমন সূক্ষ্ম, তেমনই খরচসাপেক্ষ। গোটা চিকিৎসা যজ্ঞ চলাকালীন প্লাস্টিক সার্জন ডা. অনুপম গোলাস নিজের ফি পুরোটাই মকুব করে দিয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিকে ৮১ শতাংশ নম্বর পাওয়ার পর পারমিতার ইচ্ছে ছিল বিসিএস পড়ার। অস্ত্রোপচারের ধকল সয়ে টানা একঘণ্টা বসতে পারতেন না। ফলে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে অবশেষে যাদবপুরে ভরতি। স্বপ্ন আস্তে আস্তে ডানা মেলছে যাদবপুরের ক্যাম্পাসে। পোড়া মুখ নিয়ে হীনমন্যতা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লেগেছে। কিন্তু হেরে যাওয়ার কথা ভাবেননি কখনও। একা একাই ঘুরে বেড়াতেন ছুটির বিকেলগুলোয়। এমন এক বিকেলে গড়িয়াহাটের ফুটপাথে একচোখে প্রথম দেখা শৌখিন মোমবাতি। লড়াকু মেয়ের আরেকটা চোখ যে অ্যাসিডে পুড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
“এক একটা দেড়শো টাকায় বিক্রি হয়। কী আছে এতে?” এ প্রশ্ন মাথায় আসতে ইন্টারনেট থেকে দেখে দেখে শেখা। কাঁচামাল কিনে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলা হল একদিন। প্রথমটায় একটু কিন্তু কিন্তু ছিল। বন্ধুদের দিয়েছিলেন, পরখ করতে। সকলেই বলেছিলেন, “দারুণ হয়েছে শুরু কর।” পম্পা বণিক, নীলেন্দ্র সরকাররা এগিয়ে এসেছেন পারমিতার পাশে। তাদের আউটলেটেও কিছু রেখেছেন। “আমার এই লড়াইয়ে আমার দাদা দেবজিতের কথা না বললেই নয়।” জানিয়েছেন পারমিতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.