Advertisement
Advertisement
Bardhaman

‘শাহাদত’ মডিউলে ফের বাংলা যোগ, মঙ্গলকোটের রাজমিস্ত্রির গ্রেপ্তারিতে উঠছে বহু প্রশ্ন

১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে ধৃত সন্দেহভাজন।

Accused Shahdat Terrorist arrest from Chennai has connection with Bengal

ধৃত মঙ্গলকোটের কুলসোনা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার শেখ। ছবি: জয়ন্ত দাস।

Published by: Paramita Paul
  • Posted:June 29, 2024 5:50 pm
  • Updated:June 29, 2024 5:50 pm  

ধীমান রায়, কাটোয়া: ২০১৪ সালের অক্টোবরে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জঙ্গি ডেরায় বিস্ফোরণের দুদিনের মধ্যেই মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া গ্রামের মাদ্রাসার সঙ্গে যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছিল। কাঁকসায় বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসার উল ইসলামের ‘শাহাদত’ মডিউলের খোঁজ মিলতেই আবারও নাম জড়াল পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের। এবার মঙ্গলকোটের কুলসোনা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার শেখ (২৮) নামে এক পরিযায়ী শ্রমিককে চেন্নাই থেকে গ্রেপ্তার করেছে এসটিএফ। যদিও আনোয়ার গ্রেপ্তারের খবর শুনেই হতবাক তাঁর পরিবার পরিজন থেকে কুলসোনা গ্রামের বাসিন্দারা। ‘শান্তশিষ্ট’ ‘নিরীহ’ স্বভাবের আনোয়ার যে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে একথা মানতেই চাইছেন না গ্রামবাসীরা। পরিবারের দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম অঞ্চলের কুলসোনা গ্রামের ঢালাইপাড়ার বাসিন্দা আনোয়ার শেখ। নিতান্ত দরিদ্র পরিবার। অ্যাসবেসটস ছাউনি ভাঙাচোরা একটি ঘরে তিন নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন স্ত্রী রেজিনা বিবি। তিনি এদিন বলেন,”শুক্রবার বিকেল প্রায় পাঁচটা নাগাদ আমাকে ফোন করে জানানো হয় চেন্নাই থেকে আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে জানতে পারি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে তাকে ধরা হয়েছে। আমার স্বামী এই ধরনের কাজ করতেই পারেন না।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: উচ্ছেদ নিয়ে ধুন্ধুমার নিউ মার্কেটে, পুলিশ-হকার সংঘর্ষে রাস্তা অবরোধ, বন্ধ বাজার]

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে আনোয়ার শেখরা তিন ভাই পাঁচ বোন। ১৯ বছর আগে তাঁর মা মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর বাবা আনিসুর রহমান ফের দ্বিতীয় বিয়ে করে নাবালক নাবালিকা সন্তানদের ছেড়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। পাশের গ্রামেই থাকতেন মাসি জাবিদা বিবি। বিধবা নিঃসন্তান জাবিদা বিবি তখন তাঁর দিদির সন্তানদের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। তিনি কুলসোনা গ্রামে এসে বোনপো বোনঝিদের দেখাশোনা শুরু করেন। জাবিদা বিবি বলেন,”আমাদের জমিজমা কিছুই নেই। খুব গরিব পরিবার। লোকের কাছে হাত পেতে ছেলেমেয়েদের বড় করেছি। বোনপোরা এখন যে যার মতন খেটে খায়। ওরা কেউ জঙ্গি হতে পারে না।”

জানা গিয়েছে, তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজ আনোয়ার শেখ। বড়দাদা আলিম শেখ মোটরভ্যান চালান। ছোট ভাই সেলিম চেন্নাইয়ে একটি চামড়ার কারখানায় কাজ করেন। আনোয়ার আগে উত্তরপ্রদেশে কাজ করতেন। পরে তিনি ছোট ভাইয়ের সঙ্গে চেন্নাই চলে যান। সেখানে একটি লণ্ড্রিতে কাজ করতেন বলে জানা গিয়েছে। সেখান থেকেই এসটিএফ শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিন শনিবার ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসার কথা।

গ্রামবাসী আবদুল হায়াদ শেখ, ভোলা শেখরা বলেন, “আমরা এই খবর শোনার পর অবাক হয়ে গিয়েছি। আমাদের গ্রামের সঙ্গে কোনও জঙ্গি সংগঠনের সম্পর্ক নেই। আনোয়ার নিরীহ প্রকৃতির ছেলে। অতি দরিদ্র পরিবার। রুজি রোজগারের স্বার্থে বাইরে কাজ করতে যেতে হয়েছে। এমন তো অনেকেই যায়। আমাদের মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে। ভালো করে খতিয়ে দেখা উচিত। আনোয়ারকে ফাঁসানো হয়েছে বলেই আমাদের ধারণা।”

[আরও পড়ুন: ১০ টন নষ্ট খেজুর ধাপায় ফেলতে চেয়ে চিঠি ব্যবসায়ীর, আপত্তি পুরসভার]

উল্লেখ্য ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর দুর্গাপুজোর মহাষ্টমীর দিন বর্ধমান শহরের খাগড়াগড়ে জঙ্গিডেরায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনার দুদিনের মধ্যেই জঙ্গিযোগের দায়ে শিরোনামে উঠে এসেছিল মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া গ্রামের মাদ্রাসা। সাড়ে নয় বছর পেরিয়ে গিয়েছে। মাটির দেওয়াল খড়ের ছাউনি সেই মাদ্রাসা কবেই জমির বুকে হারিয়ে গিয়েছে। তবে আবার নতুন করে সেই স্মৃতি উস্কে দিয়েছে কুলসোনা গ্রামের আনোয়ার এসটিএফের হাতে গ্রেপ্তারের পর। যদিও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আনোয়ারের কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে মানতে পারছেন না কুলসোনাবাসী। তবে এদিন তাকে দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচাররক। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement