শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: দারিদ্র্য নিত্যসঙ্গী। বাবা প্রান্তিক কৃষক, মা গৃহবধূ। সাত ভাইবোনের সংসারে আর্থিক অনটন যেন একটু বেশিই। দিদিদের বিয়ের সময়ে খরচ জোগাড় করতে বাবার পাশে দাঁড়িয়েছিল বাড়ির সেজো ছেলে আবু সামা। সবজি বিক্রি করে কিছু টাকা তুলে দিয়েছিল বাবার হাতে। তবে সবটাই পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে। সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ঘুম আর পড়াশোনা। আর নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে অন্যদের পড়ানো। এই ছিল আবু সামার রোজকার রুটিন। ছেলের সেই কঠিন লড়াই যেন সার্থক হল আজ। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার (Higher Secondary 2023) ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা গেল, মেধাতালিকার দ্বিতীয় স্থানে উত্তর দিনাজপুরের (North Dinajpur) আবু সামা। কলা বিভাগে পড়াশোনা করা আবুর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৫ – ৯৯ শতাংশ।
উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা আবু। চাকুলিয়ার প্রমোদ দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ছাত্র সে। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব কমবেশি ৪ কিলোমিটার। প্রতিদিন সেই দূরত্ব পেরিয়ে স্কুলে যাতায়াত এবং পড়াশোনা। স্কুলের পরিকাঠামো এমন কিছু ভাল ছিল না, যাতে উচ্চমাধ্যমিকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার মতো কাউকে প্রস্তুত করবে। কিন্তু আবু সামা আলাদা। সে স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্কুলের পড়াশোনার বাইরে প্রাইভেটে পড়ত। তবে সেই খরচ জোগানোর জন্য নিজেও টিউশন (Tusion) করত। দরিদ্র পরিবারে কোনও সুযোগই ছিল না যে ছেলের পড়াশোনার জন্য অতিরিক্ত কোনও খরচ করবে। অতএব, নিজের খরচ নিজে জোগানোর রাস্তা খুঁজতে হয়েছিল তাকে।
কলা বিভাগে ৯৯ শতাংশ নম্বর পাওয়া কতটা কঠিন, সে আলোচনা নাহয় থাক আজ। উচ্চমাধ্যমিকে গোটা রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা আবু সামার সাফল্য নিঃসন্দেহে অত্যন্ত বিরল। ফলপ্রকাশের পর সে জানাচ্ছে, ইংরাজি (English) নিয়ে স্নাতকে পড়াশোনা করতে চায়। আর ভবিষ্যতে? তাতে তার উত্তর, ভালভাবে পড়াশোনা করে রাজনীতিতে (Politics) যোগ দিতে চায় সে।
চাকুলিয়ার প্রমোদ দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভিকি দত্ত জানাচ্ছেন, ”ও খুবই অভাবী পরিবারের সন্তান। গ্রামের স্কুলের শিক্ষকরা যে যতটা পেরেছেন, ওকে সাহায্য করেছে। তবে ও নিজে টিউশন পরিয়ে পড়াশোনার খরচ জোটাত। ঘড়ি ধরে সাড়ে চার থেকে ৫ ঘণ্টা ঘুমিয়েছে। ওর এত বড় সাফল্যে সকলেই খুব খুশি।” আবুর বাড়ির পরের ব্লকেই থাকেন বিধায়ক গোলাম রব্বানি। তিনি আবুর সাফল্য এবং অভাবের কথা শুনে জানিয়েছেন, ”ওর বাড়ি যাব। কথা বলব। যা যা সাহায্য দরকার, প্রক্রিয়া মেনে সবই করব আমি।” সাহায্য সত্যিই বড় দরকার আবু সামার। ওর সাফল্যে আলোয় সেই প্রয়োজনীয়তা কোথাও যেন চাপা না পড়ে যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.