পলাশ পাত্র, তেহট্ট: দূরদর্শনের বিজ্ঞাপনের সৌজন্যে প্রায় ২০ মাস পর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানকে ফিরে পেলেন এক দম্পতি। বৃহস্পতিবার বিকেলে কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগরে তাঁদের হাতে ওই কিশোরকে তুলে দেয় প্রশাসন, শিশু সুরক্ষা ইউনিট, চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কলকাতার চক্ররেলের কাছে অবস্থিত বাড়ির পাশের একটি মাঠে খেলছিল বছর তেরোর সাহিল সাউ। আচমকা কীভাবে উধাও হয়ে যায় সে। পরে তার বাড়ির লোকজন জোড়াবাগান থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। কিন্তু, তারপরও কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না তার। এদিকে, ওই কিশোরকে কৃষ্ণনগর স্টেশনে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আটক করে রেল পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও পরিবারের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাই চাইল্ড লাইনের নির্দেশে করিমপুরের একটি হোমে ওই কিশোরকে রাখা হয়।
একমাস আগে সেখান থেকে নাকাশিপাড়ার নির্মল হৃদয় নামক মানসিক রোগীদের কেন্দ্রে পাঠান হয়। গত শনিবার এই সংস্থার একটি খবর দেখানো হয় দূরদর্শনে। সেই খবর দেখেন সাহিলের বাবা কার্তিক সাউয়ের মেশোমশাই বিনোদ সাউ। খবরটি দেখার সময়ই সাহিলকে দেখতে পান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে টিভি থেকে ছবিও তুলে রাখেন। এরপরই সোজা ফোন করেন পেশায় চালক কার্তিক সাউকে। সেই সঙ্গে টিভি থেকে তোলা ছবিটাও পাঠান। আর তারপরই যোগাযোগ করা নাকাশিপাড়ার ওই সংস্থার সঙ্গে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সাহিলকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে খেতে কার্তিকবাবু বলেন, ‘বিষয়টি জানার পরেই আমি ওই সংস্থার কর্তা মোসলেম মুন্সির ফোন নম্বর যোগাড় করি ইন্টারনেট থেকে। তারপর তাঁকে ফোন করে পুরো বিষয়টা বলি। তিনি আমাকে সাহিলের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে বলেন। আমি পাঠাই। তখন মোসলেমবাবু জানান, ‘ও এখানে আছে। এরপর আমরা লালবাজারের গোয়েন্দা দপ্তরের পুলিশের সঙ্গে নাকাশিপাড়ার ওই সংস্থায় যাই।’ সাহিলের মা সুমনা সাউ ছেলেকে আদর করতে করতে বলেন, ‘কত খুঁজেছি পাইনি। ছোট থেকে ও ঠিক করে কথা বলতে পারে না। আমরা খুব চিন্তা করতাম। ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’
ওই সংস্থার প্রধান মোসলেম মুন্সী বলেন, ‘ও যখন প্রথম আসে তখন কামড়াত। কিন্তু, এখন ঠিক হয়ে গিয়েছে। আমাকে ওরা খবর দেখে শনিবার ফোন করে। তারপর সরকারি ব্যবস্থায় বাচ্চাটিকে তার বাবা-মার হাতে তুলে দেওয়া হয়।’ শিশু সুরক্ষা আধিকারিক অনিন্দ্য দাস বলেন, ‘সাহিল সাউকে কৃষ্ণনগর স্টেশনে পাওয়া যায়। তারপর চাইল্ড লাইনের নির্দেশে ওকে করিমপুর হোমে রাখা হয়েছিল। আজ তাকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.