সৌরভ মাজি ও নন্দন দত্ত: কয়লা ব্যবসায়ী (Coal Smuggler) আবদুল লতিফের গাড়ি চড়ে নিহত মাফিয়া রাজু ঝা (Raju Jha) শুধু ঘোরাঘুরিই করেছিলেন, এমনটা নয়। হত্যাকাণ্ডের সময় ওই গাড়িতে তাঁর সঙ্গে ছিল লতিফ। এমনই তথ্য উঠে আসছে তদন্তে। তবে সঙ্গীকে লক্ষ্য করে গুলির ঝাঁক ধেয়ে আসার আগেই ‘সাবধানী’ লতিফ নিজেকে বাঁচাতে আগেই গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। মিশে যায় ভিড়ে। যাতে পরবর্তী সময়ে পুলিশও ‘ফেরার’ কয়লা ব্যবসায়ীর খোঁজ না পায়, সেই কারণে এই কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, রাজু ঝা-কে লক্ষ্য করে ৬ রাউন্ড গুলি চলে, চারটি লেগেছিল রাজুর বুকে। আর তাতেই মৃত্যু হয় এই মুহূর্তে কয়লা এলাকার সবচেয়ে বড় মাফিয়ার। সেসময় তিনি মুড়ি খাচ্ছিলেন, রক্তে ভিজে গিয়েছিল তাও। পুলিশ গাড়ি পরীক্ষা করে রক্তমাখা মুড়ি দেখতে পেয়েছে। মিলেছে ৪ হাজার টাকা দামের একটি জুতোও।
যতটা ভয়াবহ ভাবা হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি রোমহর্ষক শক্তিগড়ে (Shaktigarh) কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা হত্যাকাণ্ড। ঘটনার তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসছে এবং জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে মামলা। হত্যাকাণ্ডের কিনারা করা কঠিন হয়ে উঠছে ক্রমশ। জানা গিয়েছে, শনিবার রাজু যে SUV গাড়ি চড়ে কলকাতার দিকে আসছিলেন, একই গাড়িতে ছিলেন আবদুল লতিফ-সহ ৪ জন। দুবরাজপুরের বাসিন্দা চালক শেখ নূরকে দিয়ে নিজের গাড়ি (WB 48D 7032) সহ আবদুল লতিফ পাঠিয়েছিল দুর্গাপুর। জানা গিয়েছে, এই গাড়িটি কেনা হয়েছিল ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি। বোলপুর পরিবহন দপ্তর থেকে সেই গাড়িটির রেজিস্ট্রেশনও করা হয়। শনিবার পরিকল্পনামতো দুর্গাপুর থেকে রাজু ঝা’দের নিয়ে SUV গাড়িটি কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয়। একই গাড়িতে ছিল লতিফও।
শনিবার সন্ধে সাড়ে সাতটার একটু পর কলকাতার যাওয়ার সময় শক্তিগড়ে তাদের গাড়ি দাঁড়ালে লতিফ শৌচকর্মের নাম করে নেমে যায়। তখনই দুষ্কৃতীদের গুলিবৃষ্টিতে নিমেষে প্রাণ হারান রাজু ঝা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানাচ্ছে, দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় ৪ জন ছিল। ২ জন ৭.৬৫এমএম বন্দুক থেকে গুলি চালায়। মোট ৬ রাউন্ড গুলির মধ্যে চারটিই বুকে বিঁধেছে রাজুর। এরপর ওই গাড়ি সেখানেই ফেলে পালায় দুষ্কৃতীরা। একটু দূরে তাদের জন্য একটি নীল গাড়ি অপেক্ষা করছিল। তাতে চড়ে শক্তিগড়ে রেললাইন পেরিয়ে আটাঘরের দিকে পালায়। ফেলে যাওয়া গাড়ি থেকে তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। বিপাকে পড়লে যাতে বোমা ফাটিয়ে সকলের নজর ঘোরাতে পারে, সেই উদ্দেশেই বোমা মজুত বলে মনে করছে পুলিশ।
এদিকে, গতকালের শুটআউটের পর থেকে যথারীতি ফেরার লতিফ। কিন্তু রাজুর সঙ্গে গাড়িতে যে সে ছিল, তা নিশ্চিত। এখন প্রশ্ন উঠছে, বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজুর সঙ্গে একজন পলাতক গরু ব্যবসায়ীর এক গাড়িতে থাকার কী উদ্দেশ্য? কেন ইলামবাজারে থাকা সত্বেও লতিফকে গ্রেপ্তার করেনি কেন্দ্রীয় এজেন্সি? নাকি এক গাড়িতে কলকাতার দিকে আসার পিছনে অন্য কোনও পরিকল্পনা ছিল দু’জনের? রয়েছে হাজারও প্রশ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.