সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তারির দাবিতে দীর্ঘক্ষণ জাতীয় সড়ক অবরোধ হল। বিক্ষুব্ধ আদিবাসীরা দুর্গাপুরের কাছে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত অবরোধ করে রাখলেন দু নম্বর জাতীয় সড়ক।
গত মঙ্গলবার রাতে দুর্গাপুরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশডিহায় একটি বহুতল নির্মীয়মাণ আবাসনে নিম্নমানের সামগ্রী ও শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে পলাশডিহার অন্য যুবকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। তৃণমূলের একটি অংশ আদিবাসীদের সিন্ডিকেট করতে বাধা দিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সংঘর্ষের ফলে আদিবাসী গাঁওতার যুব নেতা শ্যামল মূর্মূ গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভরতি হন। ওই রাতেই তৃণমূলের ১৭ জন হামলাকারীর বিরুদ্ধে দুর্গাপুর থানার ফরিদপুর ফাঁড়িতে অভিযোগও করা হয় আদিবাসীদের পক্ষ থেকে। গত বুধবার ফরিদপুর ফাঁড়ি ঘেরাও করে অভিযুক্তদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি করেন আদিবাসীরা।
কিন্তু ৪৮ ঘন্টা পার হলেও দোষীরা গ্রেপ্তার হয়নি। তাই শনিবার দুপুর থেকে ফরিদপুর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দুই নম্বর জাতীয় সড়কের আসানসোলের দিকের রাস্তা অবরোধ করেন আদিবাসীরা। তাঁদের নিজস্ব অস্ত্র তিরধুনক, বল্লম নিয়েই অবরোধে শামিল হন প্রায় শ’তিনেক আদিবাসী। দোষীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত অবরোধ চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেন আদিবাসী গাঁওতা সম্প্রদায়ের নেতারা।
অবরোধের ফলে আসানসোল লেনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আটকে যায় সার্ভিস রোডও। অবরোধের জেরে প্রায় পানাগড় পর্যন্ত রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে যায় সমস্ত যানবাহন। অবরোধ তুলতে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের এসিপি–১(পূর্ব) আরিশ বিলালের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স ফরিদপুর ফাঁড়িতে হাজিরও হয়। কিন্তু অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেও তারা অবরোধ তুলতে ব্যর্থ হয়।
প্রায় এক ঘন্টা পাঁচ মিনিট পর এখানকার অবরোধ তুলে ফরিদপুর ফাঁড়িতে ঘেরাও ও অবরোধ শুরু করেন আদিবাসীরা। এপ্রসঙ্গে গাঁওতার রাজ্য সম্পাদক সুনীল সোরেন জানান, ‘আমাদের আদিবাসী যুব নেতাকে মারধর-সহ এলাকায় সন্ত্রাসের অভিযোগে তৃণমূলের যে ১৭ জনের নামে অভিযোগ জানানো হল। কিন্তু, পুলিশ তাদের কিছুই করল না। এমনকী আমাদের এফআইআরের প্রতিলিপিও দেওয়া হয়নি। পুলিশ শাসকদলের হয়ে নির্লজ্জের মতন কাজ করছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে ততক্ষণ ফাঁড়ি ঘেরাও করে রাখব আমরা।’
পরে জাতীয় সড়ক থেকে অবরোধ উঠলেও, সন্ধে ৬টা নাগাদ ফের আসানসোল এবং কলকাতা, দু’দিকের রাস্তা অবরোধ করেন আদিবাসীরা। দুর্গাপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কালেশ্বরী কোরা দফায় দফায় তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে, পুলিশ এই মুচলেকা দিলে তবে রাত ৮টা ১৫ নাগাদ অবরোধমুক্ত হয় জাতীয় সড়ক। যানচলাচল স্বাভাবিক হতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লেগে যায়। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি–১ (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন, ‘আমরা ঘটনার তদন্ত করে দেখছি। ইতিমধ্যে দোষীদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।’
ছবি: উদয়ন গুহরায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.