সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: চা-শ্রমিকের স্বার্থরক্ষায় তাদের সংঘবদ্ধ করে লড়াই। লক্ষ্য গোষ্ঠী উন্নয়ন। যে লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে রবিবার মালবাজারে চা বাগানের শ্রমিক সম্মেলনে বিপুল সমাবেশ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee)। চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে এমন সম্মেলন এই প্রথম। হলদিয়ায় এর আগে শ্রমিক স্বার্থে এমন সম্মেলন করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। মনে করা হচ্ছে, আজ এই সম্মেলন থেকে উত্তরের চা-শ্রমিকদের সমস্যার একপ্রকার সুরাহার পথ বাতলে দিতে পারেন অভিষেক।
শনিবার সন্ধ্যাতেই অভিষেক শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন। তাঁকে ঘিরে সেখানে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বিপুল জমায়েত হয়। এর মধ্যে এদিনই মালবাজারের ফরওয়ার্ড ক্লাবের মাঠে ১২০০ চা-শ্রমিককে নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে তাদের সমস্যা নিয়ে একেবারে খোলাখুলি আলোচনা হয়। দলের শ্রমিক সংগঠন ও জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনাও সেরে নিয়েছেন অভিষেক। সেই প্রেক্ষিতে আজ শ্রমিকদের সম্মেলনে বার্তা দেবেন তিনি।
আরও একটি কারণে আজকের সম্মেলনের গুরুত্ব অপরিসীম। উত্তরবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল পায়নি তৃণমূল। তাছাড়া বিজেপি এই উত্তরবঙ্গকেই বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করার দাবি বারবার তুলেছে। সেখানকার নানা বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিরও সেই একই দাবি। বিজেপির একাধিক নেতাকেও তাদের সমর্থন করতে দেখা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেছেন, এক বিন্দু রক্ত থাকতেও বাংলা ভাগ হতে দেবেন না। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই আজ অভিষেকের এই সম্মেলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
আজ রবিবার অভিষেকের সভা মালবাজার শহরের আর আর স্কুলের মাঠে। তার সমস্ত প্রস্তুতি সারা। গোটা মালবাজার শহরকে পোস্টার-ব্যানারে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এদিনের সম্মেলনে মোট ৬টি সাংগঠনিক জেলার চা-বাগানের শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি কোচবিহার, দার্জিলিং সমতল, দার্জিলিং পাহাড় এবং উত্তর দিনাজপুর জেলা থেকে আসা চা-শ্রমিকদের মধ্যে থেকে ৩৫ জন প্রতিনিধির কাছে এদিন তাঁদের দাবি-দাওয়া ও সমস্যার কথা জানতে চাওয়া হয়। সে সব নথিবদ্ধ করে রিপোর্ট আকারে অভিষেকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
মনে রাখতে হবে শ্রমিক সম্মেলনের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে প্রথম যখন উদ্যোগী হয় তৃণমূল, তা করা হয়েছিল এই চা-বাগানের শ্রমিকদের সামনে রেখেই। এর আগে একাধিক সংগঠন ছিল তৃণমূলেরই। তাদের নিজেদের মধ্যে নানা সমস্যা ছিল। প্রথমেই সে সব মিটিয়ে প্রতিটি সংগঠনকে এক ছাতার তলায় আনা হয়।
এদিনের আলোচনাসভায় ছিলেন আইন ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী বুলুচিক বরাইক, আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলার শ্রমিক সভাপতি রাজেশ লাকরা প্রমুখ। মন্ত্রী মলয় ঘটকের কথায়, ‘‘চা শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার নির্যাস নিয়ে প্রকাশ্য সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন আমাদের নেতা সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।” ঋতব্রত বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার সাতটি চা-বাগান অধিগ্রহণের কথা বলেছিল। ১০০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। আজও সেই কথা রাখেনি। উলটে রাজ্য সরকার আলোচনার ভিত্তিতে শ্রমিকস্বার্থে আস্তে আস্তে সব বন্ধ চা-বাগান খোলার ব্যবস্থা করেছে। এই বাস্তব পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকদের স্বার্থে লড়াইয়ের পথ বাতলে দেবেন।”
তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপ ইতিমধ্যেই ৭৮টি বাগানকে কেন্দ্র করে ৭৮টি ছোট ছোট শ্রমিক সম্মেলন করেছেন। কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়েছে শনিবার। আজ তার প্রেক্ষিতেই অভিষেকের বিরাট সমাবেশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.