সম্যক খান, মেদিনীপুর: মাত্র ২৪ ঘন্টা আগেই তাঁকে মঞ্চে তুলে পঞ্চায়েতের ‘মুখ’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। লক্ষাধিক জনতার সামনেই ঘোষণা করে গিয়েছেন, এঁরাই হবেন আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে (Panchayet Election) দলের মুখ। শাসকদলের শীর্ষ নেতার কাছ থেকে এহেন সার্টিফিকেট থেকে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন শেখ হোসিনুদ্দিন। এবার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিলেন, টিকিট পেলে ভোটে দাঁড়িয়ে মানুষের সেবা করতে প্রস্তুত তিনি।
নিজে কোনওদিন সক্রিয়ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তৃণমূলও (TMC) সেভাবে করতেন না, কেবল সমর্থক। কিন্তু নিজের কষ্টের সংসারে আবাস যোজনার বাড়ির বরাদ্দ পেয়েও তা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে খোদ অভিষেকের নজরে চলে এসেছেন তিনি। কেশপুরের (Keshpur) কলাগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উচাহার এলাকার তলকুঁয়াইতে বাড়ি তাঁর। সর্বসাকুল্যে মাত্র একবিঘা জমি আছে তাঁর। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার। মেয়ে ২২ বছরের তানিয়া পারভিন। ইংরাজিতে (English) অনার্স নিয়ে পাশ করার পর এখন বগছড়ি কলেজে বিএড পড়ছে। ছেলে শেখ মহম্মদ কাইফ এবার উচ্চমাধ্যমিক দেবে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ যোগাতে হোসিনুদ্দিনবাবু কেশপুর বাজারে এক ওষুধ দোকানে কাজও করেন। সেখান থেকে মাসে ছ’হাজার টাকা পান। টেনেটুনে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এবার আবাস যোজনার (Abas Yojona) তালিকায় ছিল শেখ হোসিনুদ্দিন। তাঁর কথায়, আবাস যোজনা থেকে মাত্র এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু দু কামরার ভদ্রস্থ একটি ঘর গড়ে তুলতে তার সঙ্গে আরও তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ হবে। কিন্তু তাঁর কাছে অত টাকা নেই। যেটুকু আছে তা মেয়ের বিয়ের জন্য গচ্ছিত করে রেখেছেন। ওই টাকা ঘর বানাতে খরচ করে দিলে তিনি আর মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন না। তাই তিনি তা প্রত্যাখান করেছেন। কিন্তু তিনি ভাবতেও পারেননি মাত্র ১৫ দিন আগে দেবদূতের ন্যায় অভিষেকের এক ‘দূত’ তাঁর কাছে চলে আসবেন! অজ্ঞাতপরিচয় ওই দূত হোসিনুদ্দিনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে তাঁর বাড়ির ছবি তুলে নিয়ে যান। আর সেইসঙ্গে কেশপুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় হাজির হওয়ার অনুরোধও জানান।
তখনও কিছু বুঝতে পারেননি। সভামঞ্চে হঠাৎ করে অভিষেকবাবু তাঁর নাম ধরে ডাকায় প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ভাবতে পারেননি ওই এক ডাকে তাঁর জীবনের গতিপথ অন্যদিকে মোড় নিয়ে নেবে। তাঁর মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি আগামী পঞ্চায়েতে ভবিষ্যৎ দলের মুখ হিসেবে তুলে ধরায় যারপরনাই আপ্লুত তিনি। বিরাট কিছু অঘটনা না ঘটলে তিনি যে প্রার্থী হচ্ছেন, তা নিশ্চিত। রাজি হোসিনুদ্দিনবাবুও। তিনি বলেছেন, ”মানুষের সেবা যদি করতে পারি, এর থেকে আনন্দের আর কী আছে? সরকারি প্রকল্পের সুবিধা গরিব মানুষ পাক। সেটাই সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত। অভিষেকবাবু যেভাবে দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ রাজনীতি করার প্রয়াস নিয়েছেন তাকে কুর্ণিশ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.