ফাইল ছবি
সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Elections 2024) আগে শুধু জুমলা। কিন্তু একটা চ্যালেঞ্জ নিতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী। তিন সপ্তাহ, ঘণ্টার হিসাবে প্রায় ৫০০ ঘণ্টা পার। তার পরও শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারলেন না। বৃহস্পতিবার যেদিন রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী, সেদিনই ফের খোঁচা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ঝাড়গ্রামে দলীয় কর্মীদের বৈঠকে হারা আসন পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দিলেন অভিষেক।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা, মিনিটের পর মিনিট কেটে যাচ্ছে। তাঁর গ্যারান্টির অন্তঃসারশূন্যতা নিয়ে মোদিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন অভিষেক। এর পরই বিজেপিকে তুলোধোনা করে এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘২১দিন, ৫০০+ ঘণ্টা, ৩০০০৯+ মিনিট পেরিয়ে গেলেও এখনও নীরব বিজেপি। আরও বিভ্রান্তিকর জুমলা ঘোষণা করার পরিবর্তে, গ্যারান্টার বিজেপি ২০২১ সালে বাংলায় পরাজয়ের পর মনরেগা এবং আবাস প্লাসের শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক।’ ইতিমধ্যেই এনিয়ে একাধিকবার তথ্য দিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেছেন অভিষেক। প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে। এদিনই ঝাড়গ্রামে দলের নেতৃত্বকে নিয়ে কর্মিসভা ছিল অভিষেকের। সেই বৈঠকে দলের পুরনো বসে যাওয়া কর্মীদের সমান গুরুত্ব দিয়ে এককাট্টা লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে ঝাড়গ্রামের হারা আসন পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন সাংসদ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নবজোয়ার কর্মসুচি নিয়ে ঝাড়গ্রাম সফরে এসেছিলেন তিনি। তার ফলও মিলেছিল হাতেনাতে। বিজেপি ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহলে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রামের জেতা আসন হাতছাড়া হয়েছিল তৃণমূলের। এবার সেই আসন যাতে আবারও নিজেদের দখলে আসে, সেই লক্ষ্যে দলীয় বৈঠকে নিজেদের দ্বন্দ্ব ভুলে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ার বার্তা দিলেন অভিষেক। প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের বৈঠকে দ্বন্দ্ব মেটাতে জেলা সভাপতি এবং নয়াগ্রাম ব্লকের এক সময়ের এক দাপুটে নেতাকে আলাদাভাবে মুখোমুখি বসিয়ে আধঘণ্টা কথা বলেন তিনি। তার আগে দু ঘণ্টার বৈঠকে আগাগোড়া নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব মিটিয়ে সমন্বয় বজার রেখে কাজ করার বার্তা দেন। তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সোরেন প্রচারে গিয়ে যা যা সমস্যায় পড়ছেন, তা তুলে ধরেন। কিছু ক্ষেত্রে প্রচার সহায়ক টিম ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। অভিষেক বলে দেন, যে অঞ্চলে প্রার্থীর প্রচার হবে সেই এলাকার বুথ, অঞ্চল এবং ব্লক নেতৃত্বকে আগে জানাতে হবে এবং তঁাদের প্রচারের অংশ করতে হবে। সঙ্গে প্রার্থীকে বলেন প্রচারে মানুষ যে সমস্যার কথা বলবেন তা খাতায় নোট নিতে হবে। নির্বাচনের পর সেসব সমস্যার সমাধান হবে।
নয়াগ্রামের ব্লকের উজ্বল দত্ত এক সময় জেলা তৃণমূলের কোঅর্ডিনেটর ছিলেন। প্রাক্তন ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, প্রাক্তন নায়াগ্রাম ব্লক সভাপতি এই উজ্বল দত্তর সঙ্গে বর্তমান জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মুর দ্বন্দ্ব বেশ কিছুদিন চর্চায়। উজ্বল দত্তকে অন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাতে দলীয় কর্মসূচিতে তিনি খুব একটা অংশ নেন না বলে খবর। এই উজ্বল এবং ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুকে নিয়ে আলাদা কথা বলেন সাংসদ। উজ্জ্বলবাবুকে দলের কর্মসূচিতে যুক্ত করে নেওয়ার নির্দেশ দেন। উজ্জ্বল পরে বলেন, “সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আমাকে এবং জেলা সভাপতিকে কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। প্রচারে আমাকে ডাকলে নিশ্চয়ই যাব।” কয়েকজন প্রাক্তন ব্লক সভাপতিকেও ডাকা হয়। বিনপুর ১ ব্লকের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি শ্যামল মাহাতোও অভিযোগ করেন তাঁকে কোনও কর্মসুচিতে ডাকা হয় না। বর্তমান ব্লক সভাপতি তারাচাঁদ হেমব্রমকে অভিষেক নির্দেশ দেন শ্যামলকে দলের কাজে সঙ্গে নিয়ে চলার জন্য। ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনের নির্বাচনী কমিটির ৫১ জন ছাড়াও আরও ত্রিশ জন নেতৃত্ব আমন্ত্রিত ছিলেন। মোট ৮১ জনকে নিয়ে এদিন বৈঠক হয়। প্রার্থী কালীপদ সোরেন বলেন, “সবাইকে নিয়ে চলার কথা বলে গিয়েছেন সাংসদ।” বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা পরে বৈঠক নিয়ে বলেন, “জেতার লক্ষ্যকে সামনে রেখে সবাইকে নিয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন। নিজেদের মধ্যে যেন কোনও দ্বন্দ্ব না থাকে।” ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গীর কথায়, “সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ট্রিপিল ইঞ্জিন সরকার গড়ার কথা বলেছেন। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.