সুমন করাতি, হুগলি: দাবি ছিল কেবল একটা রাস্তার। তার জন্য কী না কী সহ্য করতে হয়েছে অশীতিপর বৃদ্ধকে। বিস্তর অনুরোধ-উপরোধ, আবেদন-নিবেদনের পালটা দিনের পর দিন জুটেছে উপেক্ষা, তাচ্ছিল্য, হুমকি। জীবনের এতগুলো বসন্ত কাটিয়ে আসার পর একসময় হাল ছেড়েই দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, এজন্মে বুঝি বাড়ির সামনে রাস্তা দেখে যাওয়া হবে না তাঁর। অবশেষে সেই অসম্ভবই সম্ভব হয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদান্যতায়। জীবন সায়াহ্নে এসে এতদিনের দাবি বাস্তবায়িত হতে দেখে চোখে জল বৃদ্ধ নবকুমার গুপ্তর। অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে।
ঘটনাটি একটু খোলসা করা যাক। আরামবাগের বাতানল গ্রাম পঞ্চায়েতের তেলুয়া গ্রামের গুপ্ত পাড়ার বাসিন্দা বৃদ্ধ দম্পতি নবকুমার গুপ্ত ও জয়া গুপ্ত। খাতায়-কলমে গ্রামের বাসিন্দা হলেও গ্রামের মূল অংশ থেকে তাঁরা কার্যত বিচ্ছিন্ন। কারণ, তাঁদের যাতায়াতের কোনও রাস্তাই ছিল না। কখনও পুকুরপাড় দিয়ে, অপরের ভিটে বা জায়গা ডিঙিয়ে যেতে হত মূল রাস্তায়। স্বাধীনতার পর থেকেই কংগ্রেসি সমর্থকদের কয়েকঘর বাসিন্দার ওই পাড়া যেন গ্রামের মধ্যে থেকেও পাণ্ডববর্জিত হয়েই পড়েছিল। কেবল রাস্তাই নয়, আরও অন্যান্য পরিষেবা থেকেও পাড়াটি ছিল বঞ্চিত। দিনের পর দিন এই বঞ্চনা সহ্য করতে না পেরে অবশেষে সরকারের কাছে একটি রাস্তা করে দেওয়ার আবেদন জানান নবকুমারবাবু। কিন্তু, সিপিএম আমলে প্রশাসন কংগ্রেসি পাড়ায় রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার কোনও গরজ দেখায়নি। উলটে বলেছিল, কোনও কংগ্রেসির পাড়ায় রাস্তা করে দেওয়া হবে না।
এর পর রাজ্যে পালাবদলের পর তৃণমূল সরকার গঠিত হয়। আশার আলো দেখতে পেয়ে স্থানীয় তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে রাস্তা তৈরির আবেদন জানান। কাজ না হওয়ায় ফের আবেদন করেন। তাতেও নিরুত্তর থাকে পঞ্চায়েত। এর পরই চোয়াল চেপে পুরোদমে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়েন নবকুমার। পাড়ার অবস্থার কথা জানিয়ে নবান্নে চিঠি লেখেন। এর পর দিদিকে বলো-তে লেখেন। পর্যায়ক্রমে বিডিও, এসডিও, ডিএম, পঞ্চায়েত দপ্তর-সহ একাধিক জায়গায় চিঠি লেখেন। তার উত্তরও পান। কিন্তু রাস্তা হয় না। একদিন বিডিও তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে বলেন, আপনার তো রাস্তা হয়ে গিয়েছে। খাতায়-কলমে ৯ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। যা শুনে বৃদ্ধ মাস্টারের মাথায় হাত পড়ে। এক ছটাক মাটিও পড়েনি। বিডিও-কে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন।
দেখা যায়, সত্যিই কোনও রাস্তা-ই হয়নি। এর পর পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জনসংযোগ করতে তৃণমূলের নবজোয়ার যাত্রায় বেরোন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরামবাগেও আসেন। অভিষেকের সেই সফরকেই পাখির চোখ করেন বৃদ্ধ। আরামবাগের ভালিয়ায় আসার পর যখন ফিরে যাচ্ছিলেন সেই সময় অভিষেকের কনভয়ের সামনে রাস্তায় শুয়ে পড়ে তাঁর গাড়ি আটকে দেন বৃদ্ধ মাস্টারমশাই। হইচই পড়ে যায়। অভিষেকের কানে পৌঁছয় বৃদ্ধ মাস্টারের কথা। গাড়ি থেকে নেমে অভিষেক তাঁর কাছে গিয়ে গোটা ঘটনা শোনেন। আশ্বাস দেন, শীঘ্র রাস্তার কাজ হবে। যেমন কথা, তেমন কাজ। পরদিনই জেলা পরিষদ ও জেলাশাসকের অফিস থেকে লোকজন আসেন। যাবতীয় তথ্য নিয়ে যান। স্কিম করে পাঠান। অবশেষে জয় হয় ৮১ বছরের বৃদ্ধ মাস্টারমশাইয়ের। তৈরি হয় রাস্তা। দীর্ঘদিনে লড়াইয়ে জয়ের মুখ দেখায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানান বৃদ্ধ মাস্টারমশাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.