রমেন দাস এবং গোবিন্দ রায়: লেনিন বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের পূর্বাভাস কখনও করা যায় না’। তাই তো তাঁর ‘বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে’র পূর্বাভাস টের পাওয়া যায়নি, ঠিক কাজের আগে পর্যন্ত। স্বপ্নে দেখা নায়কের হাত ধরে যে বিপ্লব ঘটানোর স্পর্ধা লালিত হয়েছে এতদিন ধরে, হয়ত তারই বাস্তব প্রতিফলন আগাম কোনও ইঙ্গিত ছাড়া এভাবে পেশা বদলে নেওয়া। বলা হচ্ছে, তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Abhijit Ganguly) কথা।
আদর্শ বলতে অভারতীয় বেশ কিছু ঐতিহাসিক চরিত্র। আজও তাঁদের নাম ধরেই প্রচার করে জনতার কাছে যাওয়ার প্রবণতা বামপন্থীদের। কিন্তু ভারতের এত বিখ্যাত মানুষ, ঐতিহাসিক চরিত্র, তাঁদের এত কর্মকাণ্ড, তা নিয়ে যুবসমাজের কাছে যাওয়ার কোনও তাগিদ নেই সিপিএমের (CPM)। তা নিয়ে বেশ আপত্তি রয়েছে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Abhijit Ganguly)। ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল‘কে একান্ত সাক্ষাৎকারে সেই অনুভূতির কথা বললেন তিনি। তবে এও বলতে পিছপা হলেন না যে ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন, তিনিই লেনিন! একদা স্বপ্ন দেখা বামপন্থার সেই পথ অচিরেই বেঁকে গিয়েছে ডানদিকে। এখন তিনি গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী। ঈশ্বরবিশ্বাস তাঁকে বাম-পথ থেকে দূরে ঠেলে নিয়ে গিয়েছে। ছোটবেলা থেকে বড়বেলার এই দীর্ঘ বিবর্তনের কথা ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালে‘ মন খুলে উজাড় করে দিলেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
বিচারালয়ে থাকাকালীন তাঁকে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন বলে মনে করতেন অনেকে। তাঁদের ধারণায় অবশ্য বিশেষ ভুল ছিল না। আসলে প্রবীণ সিপিএম (CPM) নেতা তথা দুঁদে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতাই এর অন্যতম কারণ। তিনি নিজেই বলতেন, বিকাশরঞ্জনবাবুর পায়ের তলায় বসে আইন শিখেছেন। বলেন আজও। তিনি তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম চর্চিত ব্যক্তিত্ব। একসময়ে স্বপ্ন দেখতেন লেনিন হওয়ার। আজ পদ্মপথে গিয়ে কি বামপন্থার সেই আদর্শ থেকে বেরতে পেরেছেন?
‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালে‘র এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ”আমি ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম, আমি লেনিন। তাতে কী? আমি কি হতে পেরেছি? আমি চে গুয়েভারা হতে পেরেছি? হতে পারিনি। এঁরা তো সব ইতিহাসের চরিত্র। কমিউনিস্টরা রাজনৈতিক হত্যায় বিশ্বাস করে। তাদের জন্যই ওই শব্দটা এসেছে। তারা কাদের নিয়ে আলোচনা করে? দেশের বিখ্যাত, ঐতিহাসিক চরিত্রদের নিয়ে তো আলোচনা করে না। তাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু মার্কস, মাও জে দং, অমুক-তমুক। তাঁরা হয়ত অনেক ভালো কথা বলেছেন। নিশ্চয় বলেছেন। কিন্তু আমাদের দেশের ঐতিহাসিক চরিত্ররা কম ভালো কথা বলেছেন? কম ভালো কাজ করেছেন? তাঁদের একটা রাজনৈতিক বক্তৃতায় বিবেকানন্দের কথা বলা আছে? দেখান তো।” বইমেলায় বামপন্থী বুকস্টল থেকে বই কিনেছেন? পড়েন? এর জবাবে অভিজিৎবাবু জানালেন, পড়া হয়নি। তবে বামপন্থীদের স্টলে যাওয়া মানেই সিপিএম হয়ে যাওয়া বা তাদের সংগঠনের কেউ হওয়া নয়, তাও স্পষ্ট করে দিলেন।
একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যর (Bikash Ranjan Bhattacharya) প্রতি শ্রদ্ধার কথা বলেছেন। বলেছেন তাঁর কাছে আইন শেখার কথা। প্রসঙ্গক্রমে ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েও এল বিকাশরঞ্জনবাবুর কথা। তা নিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ”আমি আইন শিখেছি সলিল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। প্রাক্তন অ্যাটর্নি। সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। বাজপেয়ীর বিশেষ বন্ধু, খুব প্রশংসা করতেন। আমি আইন শিখেছি অনিন্দ্য মৈত্র সাহেবের পায়ের তলায় বসে, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যর পায়ের তলায় বসে। কারণ, তাঁদের পায়ের তলায় বসারই আমি যোগ্য। সমানে সমানে বসার যোগ্য নই। তাই আমি ওকথা বলেছি।” একদা ‘শিষ্য’ বিজেপিতে (BJP)! একথা মানতেই পারেননি বিকাশরঞ্জনবাবু। তা নিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ”বিকাশদা শুনেছি, অত্যন্ত আঘাত পেয়েছিলেন। কিন্তু আমার তো বামপন্থীদের সঙ্গে যাওয়ার কথা নয়। তাদের সঙ্গে তো আমার মৌলিক জায়গাতেই মেলে না। আমি ধর্মে বিশ্বাস করি, ধর্মাচরণ করি, ঈশ্বর সম্পর্কে আমার একটা ধারণা আছে। কিন্তু বিকাশদাদের দল এসব মানে না, করে না।”
তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের যুক্তিতে কোনও খাদ নেই, সত্যি। বামপন্থী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হলেও সরাসরি বামপন্থী (Left Front) দলেই যেতে হবে, তা না হতেই পারে। আর সেই কারণে নিজের পথ আলাদা করে নিয়েছেন। তবে ছোটবেলার স্বপ্নে দেখা লেনিন, যাঁকে দেখে বামপন্থায় শ্রদ্ধাশীল হয়েছিলেন, তিনিও তো অভারতীয়ই। সেক্ষেত্রে বিবেকানন্দ বা ভারতীয় মনীষীদের কথা উল্লেখ না করা বামপন্থীদের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত তফাৎটা কি একটু পরস্পর বিরোধী নয়? সে প্রশ্ন রয়েই গেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.