বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: বিচারপতির তুলাদণ্ড সরিয়ে রেখে পদ্ম হাতে রাজনীতির ময়দানে নেমেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গ সফরের প্রাক্কালে ‘হাইপ্রোফাইল’ অভিজিতের পদ্ম ঘনিষ্ঠতায় মৃদু জল্পনা ছড়ায় হয়ত মোদির হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেবেন তিনি। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সুকান্ত ও শুভেন্দুই সহায় হয় তাঁর। আগামী শনিবার শিলিগুড়িতে জনসভা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এই সভায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় থাকতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছিল বিজেপি সূত্রে। যদিও শেষ পাওয়া খবরে, সেই সভামঞ্চেও ঠাঁই হচ্ছে না অভিজিৎবাবুর। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে বঙ্গ বিজেপি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে উৎসাহ দেখালেও, তাঁর বিজেপি যোগকে কি খুব একটা পাত্তা দিতে নারাজ কেন্দ্রীয় বিজেপি?
একের পর এক লবির গেরোয় আটকে থাকা বঙ্গ বিজেপির রিপোর্ট কার্ডে এমনিতেই খুব একটা খুশি নয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রে খবর, শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার ও দিলীপ ঘোষ লবির যাঁতাকলে পড়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরম আকার নিয়েছে বিজেপিতে। বঙ্গ সফরে এসে সুকান্ত ও শুভেন্দুর সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করে সেই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে একসাথে লড়াইয়ে ঝাঁপাতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলেই খবর। ঝিমিয়ে পড়া বিজেপিকে চাঙ্গা করার টনিক দিলেও বাংলায় বিজেপির যোগদান পর্বে খুব একটা আগ্রহ নেই মোদি-শাহদের। তাঁদের হাত ধরে এবার বাংলার কোনও নেতা বিজেপি যোগ দিক সেটা চান না তাঁরা। কারণ ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের পর একের পর এক তৃণমূলের দলবদলুদের ঘর ওয়াপসিকে মোটেও ভালোভাবে নেননি মোদি-শাহ। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর চাইছে না কেন্দ্র। রাজনৈতিক মহলের অনুমান, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যতই হাইপ্রোফাইল হোন না কেন অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে নবাগতদের সঙ্গে মঞ্চভাগের বিষয়টিকে সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পাশাপাশি নিয়োগ দুর্নীতি থেকে একের পর এক ঘটনা বিজেপির হাতে অস্ত্র তুলে দিলেও, সেই অর্থে ‘স্কোর’ করতে পারেনি বঙ্গ বিজেপি। যার জেরে রিপোর্ট কার্ডে নম্বর কমেছে সুকান্ত-শুভেন্দুদের। বঙ্গ বিজেপির এই এজেন্সি নির্ভর রাজনীতিতেও একেবারে খুশি নন কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে, দলবদলু ও নবাগতদের গুরুত্ব দিলে বিজেপির অন্দরে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হতে পারে। বিজেপি সূত্রের খবর, তাই নবাগতদের বেশি গুরুত্ব না দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বার্তা দিতে চান পুরানো নেতাকর্মীদের উপরই আস্থা তাঁদের।
তবে শুধু অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নন, শনিবার শিলিগুড়িতে প্রধানমন্ত্রীর সভা থাকলেও সেই সভায় যোগ দেওয়া এখনও নিশ্চিত নয় প্রাক্তন আমলা তথা দার্জিলিংয়ের সম্ভাব্য প্রার্থী হর্ষবর্ধন শ্রিংলার। দীর্ঘদিন ধরেই দার্জিলিং লোকসভা আসনে জনসংযোগে নেমেছেন এই প্রাক্তন আমলা। বিভিন্ন আড্ডায় নিজেকে ‘ভূমিপুত্র’ দাবি করে পরোক্ষে বুঝিয়ে দিতে ভোলেননি তিনিই সম্ভাব্য প্রার্থী। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও বিজেপিতে যোগ দেননি শ্রিংলা। এই পরিস্থিতিতে মোদির সভায় তিনি আদৌ যোগ দেবেন কি না তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে পাহাড় রাজনীতিতে।
অন্যদিকে সাংসদ রাজু বিস্তা কয়েকদিন থেকে পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শুক্রবার কার্শিয়াং ও মিরিকের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে কবুল করেছেন পাহাড়ের রাজনৈতিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিয়ে এবার প্রধানমন্ত্রী কিছু না-কিছু আশার কথা বলবেন। পাহাড় থেকে প্রধানমন্ত্রীর সভায় লোকজন পাঠানোর মরিয়া চেষ্টায় নেমে জনসংযোগের কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও লক্ষ্যণীয় ভাবেই তিনি একবারের জন্য কোথাও শ্রীংলার প্রসঙ্গ তোলেননি। অবশ্য প্রতিটি গ্রামীণ এলাকায় তিনিই যে প্রার্থী হচ্ছেন পরোক্ষে সে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে সময় যত গড়াচ্ছে বিজেপির দ্বন্দ্ব ততই স্পষ্ট হচ্ছে পাহাড় রাজনীতিতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.