বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: হাত ভাঙা অবস্থায় সত্তরোর্ধ্ব মাকে হাসপাতলে ভরতি করিয়ে শিমলা বেড়াতে চলে গিয়েছিলেন মেয়ে। অথচ ভরতির পরের দিনই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছুটি দিয়ে দিয়েছিল বৃদ্ধাকে। কিন্তু বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই। অগত্যা পনেরো দিন ধরে হাসপাতালে পড়ে থাকতে হল ওই বৃদ্ধাকে। অবশেষে তিন যুবকের চেষ্টায় ঘরে ফিরলেন বৃদ্ধা।
নদিয়ার কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা উষারানি রক্ষিত। আগে শান্তিপুরের সুত্রাগড়ে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি। তাঁর ডান হাত ভেঙে যাওয়ায় ৫ অক্টোবর বৃদ্ধাকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে মাকে ভরতি করেন মেয়ে নীলিমা ইন্দ্র। এরপর কিছু না জানিয়েই পরিবারের সঙ্গে শিমলা বেড়াতে চলে যান তিনি। কিন্তু ভরতির পরের দিনই বৃদ্ধাকে ছুটি দিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে হাসপাতালেই থেকে যান তিনি। বৃদ্ধার অভিযোগ, ‘ভরতি করিয়ে দিয়ে যাওয়ার পর আমার মেয়ে বা কেউ আমার খোঁজ নিতে আসেনি। আমি অনেকদিন ধরেই বাড়ি যেতে চাইছিলাম।’
এভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পর অগত্যা হাসপাতালের তরফেই বৃদ্ধার পরিবারের খোঁজ শুরু করা হয়। কিন্তু সেখানেও সমস্যা, হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধাকে ভরতি করানোর সময় তার ঠিকানা লেখা হয়েছিল কৃষ্ণনগর স্টেশন রোড। কিন্তু কোনও ফোন নম্বর দেওয়া হয়নি। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই ওই বৃদ্ধার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। শেষপর্যন্ত কৃষ্ণনগরের যুবক প্রদীপ মজুমদার ও শান্তিপুরের বাপ্পা ও লালটু দাস সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ওই বৃদ্ধা জানান, ‘তার মেয়ে কৃষ্ণনগরের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন।’ তিনি শান্তিপুরের সুত্রাগড়ের কে সি রোডের একটি ঠিকানাও দেন। শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণনগরের স্টেশনের অ্যাপ্রোচ রোডের একটি ফ্ল্যাটে বৃদ্ধার মেয়ে নীলিমা ইন্দ্রর খোঁজ পান প্রদীপ মজুমদার। শান্তিপুর সুত্রাগড় বেনেপাড়া এলাকায় বৃদ্ধার ভাইপো বলাই রক্ষিতের খোঁজ পান বাপ্পা দাস ও লাল্টু দাস।
গোটা বিষয়টি জানার পরই বলাইবাবু জেঠিমাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন। তিনি জানিয়েছেন ,’আমার দিদি ভুল ঠিকানা দেওয়ার জন্যই আমাকে ভুগতে হল।’ উষারানিদেবী যে হাসপাতালে সেকথাও জানতেন না বলেই জানান তিনি। মাকে হাসপাতালে ভরতি করিয়ে সিমলা বেড়াতে যাওয়া প্রসঙ্গে নীলিমা ইন্দ্রের বক্তব্য, ‘আমি মাকে বলে গিয়েছিলাম, শিমলা থেকে ফিরে এসে তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাব। আমরা শুক্রবার সিমলা থেকে বাড়ি ফিরেছি। যদিও তার আগেই আমার মাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। আমার ভুলেই ভাইকে ভোগান্তি পোহাতে হল।’ এত সমস্যার পর অবশেষে শনিবার মেয়ের ঘরে ঠাঁই হল বৃদ্ধার। তবে এই ঘটনায় অপরাধবোধে ভুগছেন নীলিমাদেবী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.