ফাইল ছবি
দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: ট্রেনের অপেক্ষা না করে মোটরবাইকে সুদূর মুম্বই থেকে ভাঙড়ে ফিরলেন এক যুবক। আবু সিদ্দিক তরফদার নামে ওই যুবক ভাঙড় থানার শাঁকশহরের বানগোদা গ্রামে ফেরার খবর পেতেই তাঁকে পাঠানো হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। আগামী ১৪ দিন সেখানেই থাকবে তিনি।
দীর্ঘদিন ধরেই আবু সিদ্দিক তরফদার মুম্বইয়ে ফলের ব্যবসা করতেন। মাঝে মধ্যেই গ্রামের বাড়িতেও আসতেন। কিন্তু আচমকা লকডাউনে বন্ধ ব্যবসা। ঘরে ফেরার রাস্তাও বন্ধ। কী করবেন বুঝে উঠতে পারেননি। এরপরই মুম্বাইয়ের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বাইকে করে বাড়িতে ফেরার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। সেইমতো দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউন শুরু হতেই ১৪ জন ৭ টি মোটর বাইকে করে মুম্বাই থেকে রওনা দেন। তিনদিনের সফর শেষে রাজস্থানের জয়পুরে পৌঁছন তাঁরা। সেখানে তাঁদের সবাইকে আটকে দেয় পুলিশ। এরপর পুলিশের হস্তক্ষেপে জয়পুরের একটি মেডিক্যাল ক্যাম্পে ১৭ দিন রাখা হয় তাঁদের। ৪ মে তাঁদের সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর তাঁরা সেখান থেকে বাইক নিয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করেন। দীর্ঘপথ অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত ভাঙড়ের বানগোদা গ্রামে ফেরেন আবু সিদ্দিক।
তবে বাড়ি ফেরার আগে তিনি ভাঙড়ের নলমুড়ি ব্লক হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। ঘরে ফিরে জামা, জুতো সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে দোতলার একটি নির্দিষ্ট ঘরে স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী নিভৃতবাসে চলে যান। অভিযোগ, এরপরেই গ্রামের বেশ কিছু লোকজন আপত্তি জানাতে থাকে যে, এভাবে বাইরের রাজ্য থেকে গ্রামে এসে থাকা যাবে না। পরে প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সুশান্ত মণ্ডলের হস্তক্ষেপে তাঁকে পুনরায় নলমুড়ি ব্লক হাসপাতলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং হাসপাতালের মধ্যে নির্দিষ্ট কোয়রান্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
আবু সিদ্দিক তরফদার বলেন, “মুম্বইতে আমার ফলের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবার পর ভীষণ কষ্টের মধ্যে ছিলাম। কাছে জমানো টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তাই সবাই মিলে ঠিক করি মোটর বাইক নিয়ে যে যার বাড়িতে ফিরে যাব। বাড়ি ফেরার পথে বেশ কিছুদিন কোয়ারেন্টাইনে ছিলাম। আমার কাছে সমস্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট আছে। তারপরও নিজের বাড়িতে ফিরে প্রতিবেশীদের আপত্তিতে আবারও আমাকে হাসপাতালের কোয়রেন্টাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হল। আমি সবাইকে বলেছিলাম প্রশাসনের নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট ঘরে ১৪ দিন নিভৃতবাসে থাকব। কেউ আমার কথা শুনল না। প্রতিবেশীরাই যে পাশে থাকবে না তা বুঝতে পারিনি।
প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, চারিদিকে যেভাবে করোনা ধরা পড়ছে তাতে করে কেউ আর ভরসা রাখতে পারছে না। যেকোনও রকম ঝুঁকি এড়াতে তাই প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তাকে কোয়রান্টিনে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, ৫ মে ছত্তিশগড় থেকে দুটি মোটর বাইকে করে চারজন জীবনতলা থানা এলাকায় নিজেদের বাড়িতে ফিরে এসেছেন হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.