রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। স্রেফ এই সন্দেহে স্ত্রীকে খুন করে আত্মঘাতী হলেন এক যুবক। এমনকি ৯ মাসের শিশুকন্যাকেও আছড়ে খুনের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের উত্তরপাড়ায়। মৃতেরা হলেন অচিন্ত্য সাঁতরা ও জবা সাঁতরা । আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁদের শিশুকন্যা পিংকি। ঘটনায় মৃতার মা মিঠু রায় মেয়ের শ্বশুর সুশান্ত, শাশুড়ি উর্মিলা, জা বন্দনা-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর দাবি, জবাকে শুধুই সন্দেহ করত শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কোনওদিন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। সেই সন্দেহের কারণেই এই চরম পরিণতি।
মৃতার মায়ের কথায়, “বরাবর মেয়েকে সন্দেহ করেছে। আমরা বলেছি প্রমাণ দেখান। কিন্তু কোনওদিন কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি। আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য ওদের গোটা পরিবারই দায়ী।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ধ্রুব দাস জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে কে কাকে মেরেছে বা কিভাবে পুরো ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিশুটিকেই বা কীভাবে আঘাত করা হয়েছে তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অচিন্ত্যর মা উর্মিলা এদিন দাবি করেন, “ঘটনার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। ঘটনার সময় আমরা ছিলামও না।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে অচিন্ত্যর বাড়িতে অশান্তি শুরু হয়েছিল। মারধরও করা হচ্ছিল জবাকে। পরে স্থানীয়রা গিয়ে দেখেন ঘরে পড়ে রয়েছে জবার রক্তাক্ত দেহ। মাথায় বাঁশ জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা। আর ঘরের মধ্যেই ছাউনির কাঠামোয় ঝুলছে অচিন্ত্য। খবর পেয়ে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। ঘরের মধ্যেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল শিশুকন্যাও। তাকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে এসেছিলেন অচিন্ত্যর ভাই সনৎও। তিনি দাবি করেন, দাদা আলাদা থাকে। ঘটনার সময় কী হয়েছে তা তাঁরা জানেন না। তবে মাঝে মাঝে অশান্তি হত বলে জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে অচিন্ত্যর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মন্তেশ্বরেরই ধাওড়াপাড়ার জবার। সন্তান হওয়ার পর প্রায়ই অশান্তি হত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে সন্দেহ করে স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর করত অচিন্ত্য। কয়েকমাস আগে বাপের বাড়িও চলে যান জবা। দিন ১২ আগে অচিন্ত্য স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে আসে। আর এদিন সকালে এমন মর্মান্তিক পরিণতি দম্পতির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.