সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ডাইনি সন্দেহে গর্ভধারিণী মাকে খুন করল ছেলে। মধ্যযুগীয় বর্বরতা পুরুলিয়ার কেন্দা থানার কাঁটাশিয়াড়ি গ্রামে। মৃতের নাম মুসুরি মাহাতো। ওই বৃদ্ধাকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানোয় অভিযুক্ত সৃষ্টিধর মাহাতো। গ্রেপ্তারের পরও লক আপে সৃষ্টিধর বিড়বিড় করে কিছু শব্দ আওড়ে যাওয়ায় অবাক তদন্তকারীরা। জেরায় সৃষ্টিধর জানান তাঁর মা ডাইনি বিদ্যা শিখতেন। এই সন্দেহে তিনি খুন করেন।
৬৬ বছরের মুসুরি মাহাতো পুজার্চনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ওই বিধবা অধিকাংশ সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন বলেও জানা যাচ্ছে। কখনও আসতেন কেন্দার কাঁটাশিয়াড়ির নিজের বাড়িতে। মুসুরির এই পুজো সন্দেহের চোখে দেখতেন ছেলে সৃষ্টিধর। তাঁর ধারণা হয়েছিল মা ডাইনি-ভূত নিয়ে কাজ করছেন। অভিযোগ, এই সন্দেহে মাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করেন সৃষ্টিধর। অভিযুক্তের দাদা গুণধর মাহাতোর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করে। বাজেয়াপ্ত করা হয়ছে ধারালো অস্ত্রটিও। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই গ্রামের বাসিন্দা পরিতোষ মাহাতো। ওই স্কুলছাত্রের কথায়, সে ওই সময় পুকুর থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। আচমকা দেখতে পায় ধারালো অস্ত্র নিয়ে সৃষ্টিধর এক বৃদ্ধাকে ঘর থেকে বের করে এলোপাথাড়ি কোপ মারছে। ঘটনার ভয়াবহতায় প্রতিবেশীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভয়ে ঘটনাস্থল লাগোয়া কাঁটাশিয়াড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রামের কোনও পড়ুয়া যায়নি। সৃষ্টিধরের অপরাধের ধরনে অবাক পুলিশকর্মীরাও। মা-এর এই দোষ তাড়ানোর নামে গত বৈশাখ মাস থেকে অভিযুক্ত গ্রামের মন্দিরে হত্যে দিত। সৃষ্টিধর পেশায় রাজমিস্ত্রি। তবে গত কয়েক মাসে অভিযুক্ত পুরোহিতের বসনে থাকত। তাঁর এই অদ্ভুত কীর্তিতে পরিজনরাও হতবাক। খুনি ছেলেকে শুক্রবার পুরুলিয়া জেলা আদালতে পেশ করা হয়।
গত এপ্রিলে এই পুরুলিয়ার বড়াবাজারে ডাইনি সন্দেহে খুন হয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। বড়াবাজারের ঘটনায় ছেলে পুজার্চনা সেরে মাকে হত্যা করে। কেন্দাতেও দেখা গেল তার পুনরাবৃত্তি। কেন্দার এই ছবি বুঝিয়ে দিল জঙ্গলমহলের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়ার একাংশে কুসংস্কার এখনও জাঁকিয়ে বসে। সচেতনতায় প্রশাসন নানারকম ব্যবস্থা নিলেও হুঁশ ফেরার কোনও লক্ষ্মণ নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.