সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: কর্মসূত্রে বিদেশে গিয়ে করোনা আতঙ্কে বন্দি দুর্গাপুরের এক বাসিন্দা। মজুত খাবার প্রায় শেষ। বাড়ি ফেরার আরজি জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন বিকাশ দাস নামে ওই যুবক। তাঁকে ফিরিয়ে আনতে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। তা সত্ত্বেও দুর্ভাবনা কমছে না পরিবারের।
চিনের পর এশিয়ার আরেক দেশ ইরানেও ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে নোভেল করোনা ভাইরাস। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। আর এই সময়েই কাজের সূত্রে ইরানের রাজধানী তেহরানে গিয়ে মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেছেন দুর্গাপুরের যুবক বিকাশ দাস। শুধু বিকাশই নন, তাঁর সঙ্গে কলকাতার ২ বাসিন্দা এবং ভারতের অন্যান্য রাজ্যের ১১ জন-সহ মোট ২৫ জন আটকে রয়েছেন ওই একই আবাসনে। তেহরানের ইমান খোমেইনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই পারান্দের একটি ফ্ল্যাটে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি তাঁরা। সঙ্গের শুকনো খাবার ও জল মজুত রয়েছে মাত্র সাতদিনের। ইতিমধ্যেই দু’দিন অতিক্রান্ত। পাঁচদিনের রসদ সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বন্দি ভারতীয়রা।করোনা সংক্রমণ রুখতে ইরান থেকে বাতিল সমস্ত আন্তর্জাতিক উড়ান। ঘরোয়া উড়ানও বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। দিন তিনেক আগে ইরান সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই তেহরানও নিঃস্তব্ধ। রাস্তায় লোক নেই। অধিকাংশ বাজার হাট, অফিস বন্ধ। ফলে খুব দ্রুত নিজেই ব্যবস্থা করে বাড়ি ফিরতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ।
এদিকে, বিকাশের চিন্তায় ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাঁর বাবা ও মা। দুর্গাপুরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বেনাচিতির অরবিন্দ পল্লির বাসিন্দা বিকাশের বাবা বিষ্ণুপদ দাস ও মা রিনা দাস ছেলের ঘরে ফেরানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন। অন্যদিকে, হালিশহরে বিকাশের শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রী অর্পিতা দাস ও আট বছরের পুত্র বিহানও তাঁর জন্য উদ্বেগের প্রহর কাটাচ্ছেন। বছর তিনেক আগে দুবাইয়ের এক সিগারেট প্রস্তুতকারক সংস্থায় চাকরি পান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়র বিকাশ দাস। ওই সংস্থায় বছর খানেক আগে তাঁকে তেহরানে বদলি করে। ঘরবন্দি অবস্থায় বিকাশ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে স্থানীয় বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিকাশ জানিয়েছেন, “প্রতিটি মুহুর্ত আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। একদিকে, ইরানে করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে, মজুত খাবারও কমছে। তাই সবাই মিলে ভাগ করে অল্প অল্প করে খাবার খাচ্ছি।” ফ্ল্যাটের মধ্যে মুখে মাস্ক পরে থাকতে হচ্ছে ২৪ ঘন্টাই। কথা কম বলছেন, পাছে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। দিন রাত কাটছে অজানা আশঙ্কায়। সরকারের কাছে বিকাশের বিনীত আবেদন, চিনের ইউহানের মতো যেন তাঁদেরও ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।
দুর্গাপুরের বাসিন্দা করোন কবলিত ইরানে আটকে রয়েছেন, শুনেই দুর্গাপুরে বিকাশের বাড়ি যান স্থানীয় কাউন্সিলর রমাপ্রসাদ হালদার। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। রমাপ্রসাদবাবু বলেন,“রাজ্য সরকারের সঙ্গে মহকুমা শাসকের মাধ্যমে বিকাশকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কথা বলছি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও কথা হয়েছে। যেভাবেই হোক, ওঁকে দুর্গাপুরে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হবে।” দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক অনির্বাণ কোলের কথায়, “সবরকম চেষ্টা করা হবে ওই যুবককে নিরাপদে ঘরে ফেরানোর। উচ্চ আধিকারিকদের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.