অরূপ বসাক, মালবাজার: রবি ঠাকুরের আবদুল মাঝির গল্প মনে পড়ে। যিনি খুব সহজেই পদ্মায় নেকড়ে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে জিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার আর নেকড়ে বাঘ নয়। লড়াই চিতাবাঘের সঙ্গে। আবদুল মাঝির মতো দড়ি নয়, পরিবর্তে সাইকেলই যুদ্ধের হাতিয়ার। মাত্র ২ মিনিটের লড়াইতে চিতাবাঘের কবল থেকে নিজেকে বাঁচালেন মালবাজারের ওয়াসাবাড়ি চা বাগানের এক শ্রমিক। বছর আটত্রিশের ওই শ্রমিক প্রাণে বেঁচেছেন ঠিকই। তবে তাঁর চোট যথেষ্ট গুরুতর। বর্তমানে হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন সাহসী সন্তোষ সোনার।
কীভাবে চিতাবাঘটিকে পরাস্ত করলেন তিনি? সেকথা গুরুতর আহত সন্তোষ সোনার নিজেই জানান। তিনি বলেন, “চিতাবাঘটি যখন আমার উপর ঝাঁপ দেয় তখন আমি সাইকেল নিয়ে রাস্তায় পড়ে যাই। এরপর চিতাবাঘটি যখন আমার পায়ে থাবা বসায়, তখন আমি ওর গলা চেপে ধরি। তখন চিতাবাঘটি আমার মাথায় কামড়াতে আসে। তড়িঘড়ি আমি দাঁড়িয়ে পড়ি। এরপর আত্মরক্ষার জন্য সাইকেল দিয়ে মারতে থাকি চিতাবাঘটিকে। আর তাতেই চিতাবাঘটি চা বাগানের ঝোপে পালিয়ে যায়। চিতাবাঘটি ছোট ছিল বলে আমি তার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে গেলাম। আমার হাতে পায়ে, কোমরে এবং মাথায় আঘাত রয়েছে।”
আহত সন্তোষ সোনারের স্ত্রী মায়া সোনার বলেন, “সোমবার আমার স্বামী সারাদিন বাড়িতেই ছিলেন। রাতে জরুরি প্রয়োজনে কারখানার দিকে সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় কারখানা কাছে একটু অন্ধকার জায়গায় চা বাগান থেকে একটি চিতাবাঘ আচমকাই বেরিয়ে আসে। স্বামীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার স্বামী আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। চা বাগানের পাশে রাস্তায় চিতাবাঘ-সহ সাইকেল নিয়ে চা বাগানের রাস্তার উপর পড়ে যান। এরপর চিতাবাঘের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ ধরে লড়াই করেন তিনি। আক্রমণ করায় চিতাবাঘটি চা বাগানের মধ্যে পালিয়ে যায়। যদিও সেই সময় যথেষ্ট আহত হন আমার স্বামী। রক্তাক্ত অবস্থায় কোনওক্রমে বাড়ি ফেরেন।” তড়িঘড়ি তারপর তাঁকে মাল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছে তাঁর। এই ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে কাঁটা স্থানীয়রা। চা বাগানে চিতাবাঘ ধরার খাঁচা পাতার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকেরা। এব্যাপারে মালবাজার বন দপ্তরের রেঞ্জার বিভূতিভূষণ দাস বলেন, “ওই ব্যক্তির চিকিৎসার ভার বনদপ্তরের। এছাড়া ওই এলাকায় চিতাবাঘ ধরার খাঁচাও পাতা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.