অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: কয়েকদিন আগেই অসমে নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষের নাম। এরপর থেকেই বাংলায় এনআরসি হলে কী হবে, তা ভেবেই আতঙ্কের প্রহর কাটাচ্ছে রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। আর সেই আতঙ্কের জেরেই মর্মান্তিক পরিণতি হল এক যুবকের। পূর্বপুরুষের নথি কিংবা ভিটেমাটির দলিল জোগাড় করতে স্থানীয় ব্লক অফিস আর ভূমিরাজস্ব দপ্তরে ঘুরেও কোনও সমাধান না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন ওই যুবক। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের শিবনগর গ্রামে।
মৃত মিলনের বাবা জানিয়েছেন, ‘কেরলে কাজ করত ছেলে। কোনও সমস্যা ছিল না। তাজা ছেলে ঘরে ফিরেই ভোটার কার্ড আর আধার কার্ডে নামের ভুল বানান আর ঠিকানার গন্ডগোল দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিল। তার পরে সপ্তাহ দুয়েক ধরে সারা দিন বিডিও অফিসে ঘোরাফেরা করে। বলত, এগুলো সংশোধন করাতে না-পারলে ভিটে ছাড়তে হবে আব্বা!’ তিনি জানান, টানা সতেরো দিন ধরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ছোটাছুটি করেও নথির ভুল সংশোধন করাতে পারেনি। ফলে এক পর্যায়ে ‘পাগলের মতো’ হয়ে উঠেছিল। খাওয়াদাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর রবিবার রাতে নিজের ঘরে সিলিং ফ্যানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন মিলন। রাতেই জানলা থেকে ছেলের দেহ ঝুলতে দেখেন তাঁর মা।
এপ্রসঙ্গে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আতিকুর রহমান বলছেন, ‘‘নাগরিক পঞ্জি নিয়ে মানুষের মনে ভয়াবহ আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ওই যুবকও হয়তো তীব্র অ্যাংজ়াইটি ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন। তারই পরিণতিতে হয়তো এমন কাণ্ড করেছেন।’’ জানা গিয়েছে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরেও মিলনের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়নি। উলটে গ্রামের মাতব্বরেরা সালিশি করে সিদ্ধান্ত নেন, পুলিশকে না জানিয়েই দেহ কবর দেওয়া হবে। তাই-ই করা হয়। এপ্রসঙ্গে স্থানীয় ওই পঞ্চায়েতের সদস্য দাবি করেব, ‘‘শুধু মিলন নয়, গ্রামের অধিকাংশ মানুষই নাগরিক পঞ্জির আতঙ্কে ভুগছেন। ’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.