দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ব্রাইডাল ফটোশুটের টোপ দিয়ে প্রথমে যুবতীদের স্বল্পবসনা ছবি তোলা। তারপর, সেই ছবি হাতিয়ার করে ব্ল্যাকমেল করে সোনার গয়না হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে যুবককে গ্রেপ্তার করল চুঁচুড়া থানার পুলিশ। ধৃতের নাম কৃষ্ণ ঘোষ। আদতে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির (Siliguri) বাসিন্দা কৃষ্ণকে শনিবার রাত দশটা নাগাদ চুঁচুড়ার এক আবাসন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। চুঁচুড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত কৃষ্ণ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার পরিচয় দিয়ে একাধিক সুন্দরী মহিলার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতেন। কিছুদিন কথাবার্তার পর তাঁদের জুয়েলারির বিজ্ঞাপন বা ব্রাইডাল ফোটোশুটের প্রস্তাব দিতেন। দেওয়া হত শাড়ি, সালোয়ার, বিকিনি পরে সাহসী ফোটোশুট করার প্রস্তাবও। বিনিময়ে মোটা টাকার অফারও দিতেন। একেকটি অ্যাসাইনমেন্টের জন্য সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জনের টোপ দিতেন অভিযুক্ত। তবে তাঁর শর্ত ছিল, আগ্রহী মহিলাদের তাঁদের নিজস্ব সোনার গয়না নিয়ে আসতে হবে। সেইমতো মহিলারা সোনার গয়না পরে সাহসী ছবি তোলার পর তাঁদের ব্ল্যাকমেল করে সমস্ত গয়না হাতিয়ে নিতেন তিনি। যুবকের কথায় বিশ্বাস করে বহু তরুণী সর্বস্ব খুইয়েছেন।
মাসচারেক আগে ব্যান্ডেলের এক মহিলা চুঁচুড়া থানায় অভিযোগ জানান। দাবি করেন, কৃষ্ণ ঘোষ তাঁকে ব্রাইডাল শুটের জন্য ডেকে নিয়ে গিয়ে স্বল্প পোশাকে ছবি তোলার পর ব্ল্যাকমেল করে তাঁর সমস্ত গয়না হাতিয়ে নেয়। সে সময় চুঁচুড়া থানার পুলিশ তদন্তে নেমে বহু চেষ্টা করেও অভিযুক্তের নাগাল পাননি। শুক্রবার একই অভিযোগে কলকাতার বাগুইআটির দুই যুবতী চুঁচুড়া থানার দ্বারস্থ হন। তাঁরা বলেন, জুয়েলারির বিজ্ঞাপনের জন্য ছবি তুলে অর্থ উপার্জনের লোভ দেখিয়ে তাঁদের হুগলির পোলবার একটি হোটেলে নিয়ে গিয়ে সমস্ত সোনার গয়না হাতিয়ে নিয়েছেন কৃষ্ণ ঘোষ। এভাবেই একাধিক মহিলার থেকে গয়না হাতিয়েছে ওই যুবক।
আইসি অনুপম চক্রবর্তীর নেতৃত্বে চুঁচুড়া থানার পুলিশ তদন্তে নেমে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে যুবককে চিহ্নিত করে। এরপর অভিযুক্তর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে শনিবার রাতে চুঁচুড়া স্টেশনের কাছে একটি আবাসন থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে শিলিগুড়ি থেকে এসে ওই আবাসনে ঘরভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন অভিযুক্ত। সেখান থেকেই যাবতীয় প্রতারণা কারবার চালাতেন। যুবতীদের কাছ থেকে হাতানো সোনার গয়না একটি বেসরকারি স্বর্ণঋণ প্রদানকারী সংস্থার কাছে বন্ধক রেখে অভিযুক্ত মোটা টাকা তুলতেন।
অভিযুক্ত আর কত জন মহিলার সঙ্গে এই ধরনের প্রতারণা করেছেন, তা খতিয়ে দেখছে চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ। পাশাপাশি যুবতীদের স্বল্প পোশাকে তোলা ছবি কোনও পর্ন সাইটে আপলোড করা হয়েছে কি না, তা-ও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় পোলবার ওই হোটেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও। ওই হোটেলের কর্মী বা মালিক এই ঘটনার সঙ্গে কতটা যুক্ত বা তঁারা কেউ বিষয়টি জানতেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে হোটেল কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.