সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ছেলেধরা গুজবে জেরবার রাজ্যের মানুষ। প্রায়দিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হচ্ছে ভবঘুরেদের। আর এই গুজবের জেরেই মর্মান্তিক পরিণতি হল এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির। বাধ্য হয়েই মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে রাখছেন মা। দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুরের কাঁকসার ত্রিলোকচন্দ্রপুরের লোহার পাড়ায়।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ছেলেধরা গুজবের জেরে আতঙ্কে কাঁপছে পশ্চিম বর্ধমানও। কাঁকসাও এই গুজবের হাত থেকে রেহাই পায়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন অথবা ভবঘুরেরাই এই গুজবের শিকার হচ্ছেন। কাঁকসার ত্রিলোকচন্দ্রপুরের লোহার পাড়ায় বসবাস করেন বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধা সন্ধ্যা লোহার। স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন তিনি। একমাত্র ছেলে বছর সাতাশের খোকন লোহার মানসিক ভারসাম্যহীন। জানা গিয়েছে, গত রবিবার সন্ধ্যাদেবী কাজে বের হতেই খোকন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর হন্যে হয়ে ছেলেকে খুঁজতে শুরু করেন সন্ধ্যাদেবী। পরে সন্ধেয় কাঁকসা থানা থেকে যোগাযোগ করা হয় সন্ধ্যাদেবীর সঙ্গে। বলা হয়, ছেলেকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সে থানাতেই আছে। কাঁকসা থানা থেকে ছেলেকে নিয়েও আসেন মা।
এরপর থেকেই প্রবল আতঙ্কে রয়েছেন সন্ধ্যা লোহার। কাজে না বের হলে খেতে পাবেন না। আবার ছেলেকে একা ঘরে রেখে বেরও হতে পারছেন না। ফের যদি ছেলেকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর দেয় এই আতঙ্ক থেকে মুক্তি পেতে সহজ পথ বের করেছেন মা সন্ধ্যা লোহার। ছেলেকে দড়ি দিয়ে বেঁধে তবেই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন তিনি। গত দুই দিন ধরে এইভাবেই দিন কাটছে খোকনের। মা সন্ধ্যায় ঘরে ফিরলে তবেই বাঁধন মুক্ত হচ্ছে খোকন। সন্ধ্যাদেবী এই প্রসঙ্গে জানান, “কাজ না করলে খেতে পাব না। বাধ্য হয়েই বের হতে হয়। এতদিন আমি বের হলে ছেলেও বেরিয়ে যেত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি কেমন যেন বদলে গেছে। ছেলেধরা বলে যাকে খুশি মারা হচ্ছে। আমার ছেলেকেও মারা হয়েছে।” তাই ছেলেকে বাঁচাতেই বাধ্য হয়ে তাকে বেঁধে কাজে যান তিনি বলেও জানান সন্ধ্যাদেবী।
স্থানীয় বাসিন্দারা খোকনের এই পরিস্থিতি দেখে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করলেও নিজেদের অক্ষমতাও স্বীকার করেছেন। প্রতিবেশি নিখিল লোহার জানান, “বের হলেই ছেলেধরা সন্দেহে মারধর চলছে। তাই বাঁচতে এই উপায় গ্রহণ করা ছাড়া কোনও পথ নেই।” এই ঘটনা শুনেই শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কাঁকসার বিডিও সুদীপ্ত ভট্টাচার্য। তিনি জানান, “অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা প্রচার ছাড়াও ওর পরিবারের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। ওই যুবককে বাঁধন মুক্ত করারও উদ্যোগ নেবে প্রশাসন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.