সম্যক খান, মেদিনীপুর: ঘরে দুই নাতনি। কিন্তু কোনও নাতি নেই। তাই বংশরক্ষার জন্যই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি করে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল সুলতানা বিবি। মানসিক অবসাদে ভুগেই মা এমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন ধৃত সুলতানা বিবির ছেলে শেখ বাবু। সোমবার ধৃত সুলতানা বিবিকে আদালতে তোলা হয়। তার জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক। তাকে ৪ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মেদিনীপুর শহরের মির্জাবাজারে বাড়ি সুলতানা বিবির। বিত্তবান ব্যবসায়ী পরিবার। তার দুই মেয়ে এবং এক ছেলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে এবং তাঁর স্ত্রীর দুটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। তবে ঘরে পুত্রসন্তান না থাকায় সুলতানা বিবির আক্ষেপ রয়েছে যথেষ্ট। সুলতানার ছেলে শেখ বাবু জানান, তাঁর স্ত্রীর থাইরয়েড রয়েছে। তাই আবারও সন্তানধারণ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তা বলে মা যে এমন কাণ্ড করে ফেলবে তা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি। পরিবারের কাউকে শিশুচুরির কথা আগে বলেনি সুলতানা।
সুলতানার ক্যানসার আক্রান্ত এক বোন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে দেখতেই রবিবার ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন সুলতানা। দুপুরে দোকান থেকে খাওয়ার জন্য বাড়ি ফিরে সুলতানার ছেলে দেখেন, মা একটি সদ্যোজাতকে নিয়ে বসে আছে। প্রথমে দত্তকের কথা বলেন। পরক্ষণেই জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন হাসপাতাল থেকে ওই বাচ্চাটিকে চুরি করেছে সুলতানা। তৎক্ষণাৎ তিনি কোতয়ালি থানার টাউনবাবু চঞ্চল সিংহর সঙ্গে যোগাযোগ করেন সুলতানার ছেলে। মা এবং চুরি যাওয়া শিশুটিকে নিয়ে সটান পাটনাবাজার ফাঁড়ি সংলগ্ন মহিলা থানায় হাজির হয়ে যান।
শেখ বাবুর দাবি, তার মা চোর নন। দীর্ঘদিন ধরে মা মানসিক অবসাদে ভুগছেন। মাঝেমধ্যে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন। এদিন আদালতেও জামিনের আবেদন জানিয়ে সুলতানা বিবির আইনজীবী মৃণাল চৌধুরিও একই দাবি করেছেন। তবে পুলিশসূত্রে জানা গিয়েছে, হেফাজতে নিয়ে সবকিছু খতিয়ে দেখবে তারা। এর সঙ্গে আয়া বা হাসপাতালের কোনও কর্মীর যোগসাজশ আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে। শারীরিক পরীক্ষাও করা হবে সুলতানা। এদিকে, হাসপাতালে শিশু চুরির ঘটনার পর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীদের নানা জেরার মুখোমুখি হতে হচ্ছে রোগীর পরিজনদের। চুরি যাওয়া শিশুটিকে ফিরে পেয়ে তাঁর পরিজনদের মধ্যে খুশির জোয়ার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.