কল্যাণ চন্দ, বহরমপুর: ফোনে আলাপ, সেই আলাপ থেকে প্রেম, অবশেষে বিয়ে। কিন্তু সেই সংসার দু’বছরও টিকল না। তিনদিন ধরে রান্নার গ্যাস না থাকায় উনুনে রান্না করতে হচ্ছিল বধূকে। সেই অভিমানে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করলেন তিনি। বর্ণালী তরফদার (২১) নামে ওই গৃহবধূর মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বহরমপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে। শক্তিপুর থানার কাঁদখালি গ্রামের ওই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে উভয় পরিবারে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
শক্তিপুর থানার কাঁদখালি গ্রামের বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি সুমন তরফদার। প্রেম করে ওই যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল জিয়াগঞ্জের বর্ণালী মুখোপাধ্যায়ের। স্বামী-স্ত্রীর একাকী সংসার ভালই চলছিল। গত কয়েকদিন আগে রান্নার গ্যাস ফুরিয়ে যায়। বর্ণালী তাঁর স্বামীকে বারবার বলা সত্ত্বেও অর্থাভাবে নতুন গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে পারেননি সুমন। পরপর কয়েকদিন উনুনে রান্না করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন বর্ণালী। সমুন তরফদার বলেন, ১৫ আগস্ট বিকেলে গ্যাস কিনবেন বলেছিলেন তিনি। কেননা প্রায় ১২০০ টাকা তাঁর কাছে ছিল না। ওইদিন সকালে তিনি মাঠে কাজ করতে গিয়েছিলেন। দুপুর বেলায় শুনতে পান স্ত্রী বিষ খেয়েছে। তাঁর দাদা-সহ বাড়ির কয়েকজন মিলে বর্ণালীকে উদ্ধার করে স্থানীয় শক্তিপুর হাসপাতালে ভরতি করে। অবস্থা অবনতি হলে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। শনিবার ওই হাসপাতালে মৃত্যু হয় বর্ণালী তরফদারের।
রবিবার বহরমপুর মর্গে সুমন তরফদার বলেন, রাজমিস্ত্রির কাজ করে তাঁর সংসার চলে। বর্তমানে সেরকম কাজ নেই বলে মাঠেই কাজ করছিলেন। গ্যাসের দামের সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না। কিন্তু এরজন্যই তাঁর স্ত্রী পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে সেটা তিনি ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেননি। অন্যদিকে বর্ণালীর মা মানসী মুখোপাধ্যায় বলেন, মৃত্যুর আগে তাঁর মেয়ে তাঁকে আসল ঘটনা জানিয়েছিল। রান্নার গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ায় উনুনে রান্না করতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। ভালবেসে ঘর বেঁধে ওই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে বর্ণালী। তবে শেষ মুহূর্তে ভুল বুঝতে পেরেছিলেন তরুণী। বাঁচানোর আরজি জানিয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হল না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.