ছবি: জয়ন্ত দাস।
ধীমান রায়, কাটোয়া: অসুস্থতা না থাকলেও বা অস্ত্রোপচার না হলেও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে উঠে যাচ্ছে টাকা। উপভোক্তাকে রোগী সাজিয়ে তার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে সরকারি অনুদানের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় এমনই চক্র ধরা পড়ল। এই ঘটনায় এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করল কাটোয়া থানার পুলিশ।
পুলিশ জানায় ধৃতের নাম সালেহার বিবি। তার বাড়ি কাটোয়া থানার গাঁফুলিয়া গ্রামে। পূর্ব বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(গ্রামীণ) ধ্রুব দাস বলেন, “গাঁফুলিয়া গ্রাম থেকে খবর আসে সেখানে বেশ কিছু গরিব পরিবারের মহিলার কাছ থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড জমা নিয়ে সালেহার বিবি-সহ আরও কেউ সরকারি অনুদানের টাকা জালিয়াতি করে তুলে নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা ধরা পড়ার পর সালেহার বিবিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই চক্রে আর কারা জড়িত তার তদন্ত চলছে।”
জানা যায়, সোমবার পুলিশের কাছে খবর পৌঁছয় কাটোয়া ১ ব্লকের আলমপুর পঞ্চায়েতের গাঁফুলিয়া গ্রামে অশান্তি হচ্ছে। এই খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দেখা যায় গ্রামের বেশ কিছু মহিলা ও পুরুষ মিলে গাঁফুলিয়া গ্রামের সালেহার বিবি নামে ওই মহিলার বাড়ি ঘেরাও করেছে। এরপর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের মুখ থেকে ঘটনার কথা শুনে কার্যত তাজ্জব বনে যায়। স্থানীয়রা জানান, গাঁফুলিয়া গ্রামের বেশ কিছু মহিলা ও গৃহবধূর কাছে সালেহার বিবি নামে ওই মহিলা এক দেড় মাস ধরেই প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড জমা দিতে। বিনিময়ে বর্ধমানে একটি নার্সিংহোমে গিয়ে চেকআপ করালেই ১০ হাজার টাকা পেয়ে যাবেন।
সালেহার বিবির ওই প্রস্তাবে ১০ হাজার টাকার লোভে পড়ে গাঁফুলিয়ার বেশ কয়েকজন মহিলা তাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তাঁকে জমা দেন। গ্রামবাসী মেনকা বিবি বলেন, “সালেহার বিবি বলেছিল আমার জামাই বর্ধমানে একটি নার্সিংহোমে কাজ করে। সেখানে একবার গেলেই হবে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে ১২ হাজার উঠবে। আমাকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।” এরপর মেনকা বিবি সপ্তাহদুয়েক আগে সালেহারের কথামত বর্ধমানের ওই নার্সিংহোমে যান।
পরে মেনকা বিবি জানতে পারেন তার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে ৬১ হাজার ৬০০ টাকা উঠেছে। একইভাবে রিজিয়া বিবি নামে এক মহিলার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে ৭৫ হাজার ৬০০ টাকা উঠে গিয়েছে বলে তিনি জানতে পারেন। মেনকা বিবি, রিজিয়া বিবিরা পরে ঘটনার কথা স্থানীয় পঞ্চায়েতে জানিয়েছিলেন। তারপর পঞ্চায়েতের এক কর্মী তাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পরীক্ষা করলে বোঝা যায় ওই কার্ডগুলো থেকে মোটা অঙ্কের সরকারি অনুদানের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এরপরেই ওই মহিলারা চেপে ধরেন সালেহার বিবিকে।
এদিন বেশ কয়েকজন লোকজন সালেহার বিবির বাড়িতে চড়াও হয়ে টাকা ফেরত চাওয়ার দাবি করতে থাকেন। উত্তেজনা তৈরি হয়। খবর পেয়েই পুলিশ যায়। তারপর সালেহার বিবিকে আটক করা হয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কাটোয়া থানার পুলিশের একটি দলকে বর্ধমানের ওই নার্সিংহোমে সালেহার বিবির জামাই নুরুল হোসেনের সন্ধানে পাঠানো হয়। পুলিশ জানতে পারে, গাঁফুলিয়া গ্রামে অন্তত ৩৫-৪০ জনের কাছ থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেওয়া হয়েছে। তাদের ১০ হাজার টাকা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভনও দেয় সালেহার বিবি। আশঙ্কা করা হচ্ছে এভাবে কোনও বেসরকারি নার্সিংহোমের সহযোগিতায় লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.