তিয়াসা সরকার: আনলক (Unlock) পর্বে পেটের টানে কেরলে পাড়ি দিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) সুতির বাসিন্দা আবদুল হালিম।সেখানে কাজ শুরুর পর বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়তেই সমস্যার শুরু। ঠিকাদারের কাছে বাড়ি ফেরার আরজি জানাতেই বেঁকে বসেন তিনি। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বুধবার সকালে হ্যাম রেডিও ক্লাবের সহযোগিতায় অবশেষে কলকাতা পৌঁছলেন আবদুল।
জানা গিয়েছে, সুতির বাসিন্দা আবদুল রাস্তা সম্প্রসারণের কাজে যোগ দিতে বারাকপুর এসেছিলেন দীর্ঘদিন আগে। সেখানে দিনেশ হালদার নামে এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। কিন্তু লকডাউনের কারণে আবদুলের কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই কেরলে একটি কাজের সন্ধান পান ওই যুবক। সেখানে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেন। কেরল পৌঁছতেই যে কন্ট্রাক্টরের অধীন কাজ নিয়ে আবদুল গিয়েছিলেন তিনি তাঁর সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি জমা রেখে দেন। এভাবে কেটে যায় মাস দুয়েক। হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই যুবকের স্ত্রী ও সন্তান। খবর পাওয়া মাত্রই আবদুল বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিতেই শুরু সমস্যার।
অভিযোগ, কেরলের ওই ঠিকাদার কিছুতেই রাজি হননি আবদুলের আধার কার্ড ফিরিয়ে দিতে। ফলে ট্রেন না বিমানের টিকিট কাটতে পারছিলেন না তিনি। একাধিকবার কনট্রাক্টরের কাছে অনুরোধ করেও লাভ কিছুই হয়নি। এরপরই বারাকপুরে দিনেশবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন আবদুল। সব শুনে দিনেশবাবু কথা বলেন কেরলের ওই কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে। এরপরই আবদুলের থেকে কেড়ে নেওয়া হয় ফোন। উপায় না পেয়ে দিনেশবাবু যোগাযোগ করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের রাজ্য সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনিই গোটা বিষয়টি জানান কেরলের হ্যাম রেডিও অপারেটর সানি, সাজির ও শিবুদের। এরপর এই অপারেশনের দায়িত্ব নেন রেডিও ক্লাবের সদস্য তথা আইনজীবী বিষ্ণু রাও চান। তিনি সরাসরি কথা বলেন অম্বরীশ বাবুর সঙ্গে। তাঁর থেকেই আবদুল ও ওই কন্ট্রাক্টরের ফোন নম্বর নেন। এরপরই কন্ট্রাক্টরকে ফোন করে আইনি মারপ্যাঁচের হুমকি দিতেই নরম হয় অভিযুক্ত। রেডিও ক্লাবের সদস্যদের সামনেই আবদুলের আধার কার্ড ফিরিয়ে দেন তিনি।
আধার কার্ড পেলেও বাড়ি ফেরার অর্থ ছিল না আবদুলের কাছে। বিষয়টি জানার পরই বারাকপুর থেকে দিনেশবাবু বিমানের টিকিট কেটে পাঠান। রেডিও ক্লাবের সদস্যরা তাঁকে তুলে দেয় বিমানে। বুধবার সকালেই দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছন তিনি। আপাতত আবদুল রয়েছে দিনেশবাবুর বাড়িতে। ব্যাগ গুছিয়ে শীঘ্রই তিনি রওনা হবেন সুতির উদ্দেশ্যে। এত লড়াইয়ের পর বাংলায় ফিরতে পেরে হ্যাম রেডিও ও দিনেশবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আবদুল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.