দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: করোনার মোকাবিলায় লকডাউন সারা দেশজুড়ে। এ পরিস্থিতিতে রক্তশূন্য ব্লাড ব্যাংক। বিপদের দিনে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন হুগলির মগরা ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রঘুনাথ ভৌমিক। নিজেই রক্তদান করে গড়লেন মানবতার অনন্য নজির।
জন্মের পর তিন মাস বয়স থেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত মগরার সুকান্ত পল্লির ছোট্ট নীল মিস্ত্রি। বাবা নয়ন মিস্ত্রি ও মা মুক্তা মিস্ত্রি তাই জন্মের পর থেকেই নিয়ম করে ছেলেকে এসএসকেএম হাসপাতালে রক্ত দিতে নিয়ে যান। বর্তমানে ছোট্ট নীলের বয়স ১ বছর ৯ মাস। তার শরীরে এই মুহূর্তে রক্তের ভীষণ প্রয়োজন। কিন্তু লকডাউনের কারণে সমস্ত যানচলাচল বন্ধ। তাই মগরার আশেপাশে বিভিন্ন হাসপাতালে রক্তের সন্ধানে ছোটাছুটি শুরু করে দেন বাবা-মা। কিন্তু সমস্ত হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকই রক্তশূন্য। অসহায় বাবা-মা ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছিলেন না তাঁদের আদরের নীলকে কি করে রক্ত দিয়ে বাঁচাবেন।
শনিবার হন্যে হয়ে শিশুর বাবা-মা বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ছেলের জন্য এক ফোঁটা রক্ত জোগাড় করতে পারেননি। লোকমুখে একথা জানতে পারেন উপপ্রধান রঘুনাথ ভৌমিক। তিনি ছুটে আসেন অসহায় বাবা-মার কাছে। জানতে পারেন ওই দম্পতির ছেলের ব্লাড গ্রুপ বি পজিটিভ। রঘনাথবাবুরও রক্তের গ্রুপও বি পজিটিভ। তিনি আর দ্বিধা করেননি। তিনিই ওই শিশুকে রক্ত দেবেন বলে জানান।
এরপর মগরার বিডিওর পক্ষ থেকে একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেন। নীল এবং তার বাবা-মাকে নিয়ে রঘুনাথবাবু সোজা চলে যান চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতালে। সেখানেই ব্লাড ব্যাংকে রঘুনাথবাবুর রক্ত সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই রক্ত ওই শিশুটিকে দেওয়া হয়। রক্ত দিয়ে মানবিকতার নজির গড়লেন তিনি। রঘুনাথ ভৌমিক অবশ্য বলেন, “মানুষের জন্যই তো আর একটা মানুষ। তাই প্রাণের থেকে বড় কিছু হতে পারে না।” ছোট্ট নীলের বাবা মা অবশ্য জানান, “এই বিপদের দিনে উনি আমাদের ভগবান। আমরা ওনার কেউ না হওয়া সত্ত্বেও ছুটে এসেছেন। আমাদের সন্তানকে রক্ত দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.